ইরানি জ্বালানি তেলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

গত বছরের নভেম্বরে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জের ধরে দেশটির রফতানি বাণিজ্যে ধস নামে। বিশেষত ইরান থেকে ক্রেতা দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি সীমিত হয়ে আসে।

তবে ছয় মাসের জন্য আটটি দেশকে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকা সত্ত্বেও এসব দেশ ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছিল। আগামী ১ মে থেকে বিশেষ এ সুবিধা তুলে নেয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স, ব্লুমবার্গ।

পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ বেশ পুরনো। এর জের ধরে দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করেছে তেহরান। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে। অস্ত্র উন্নয়নের পথ থেকে সরে আসে তেহরান। বিনিময়ে পর্যায়ক্রমে তেহরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

তবে শুরু থেকে এ চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের আগে-পরে তিনি এ চুক্তিকে ‘মার্কিন স্বার্থ পরিপন্থী’ বলে তা বাতিলের কথা জানিয়েছিলেন। অবশেষে ২০১৮ সালে তিনি এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেন। নভেম্বরের শুরুতে নতুন করে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তিনি। এর মূল লক্ষ্য ছিল, ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি খাতকে সংকুচিত করে আনা। সর্বোপরি দেশটির অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করা।

ইরান থেকে এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে সমস্যায় পড়ে এশিয়ার দেশগুলো। তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করে। অবশেষে আটটি দেশের জন্য বিশেষ অব্যাহতি সুবিধা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এ তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, তাইওয়ান, ইতালি ও গ্রিস। ট্রাম্পের তখনকার ঘোষণা অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলেও ইরান থেকে এ আট দেশ সীমিত পরিসরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারবে। তবে এ সুবিধা চালু থাকবে ছয় মাসের জন্য।

নিষেধাজ্ঞা অব্যাহতির আওতায় চলতি বছরের মার্চে ইরান থেকে চীন প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ১৩ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। দেশটি থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাক্রমে দৈনিক গড়ে ১ লাখ ৮ হাজার ব্যারেল ও ৩ লাখ ৮৭ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। এ সময় ভারতীয় আমদানিকারকরা ইরান থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। গত মার্চে তুরস্কে প্রতিদিন গড়ে ৯৭ হাজার ব্যারেল ইরানি জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে।

চলতি মাসেই এ বিশেষ অব্যাহতি সুবিধা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে আটটি দেশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি দাবি তোলা হয়েছিল। তবে এ দাবি নাকচ করে সোমবার বিশেষ অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

১ মে থেকে এ সুবিধা আর থাকছে না। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মে মাসের শুরুতে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির বাড়তি সুবিধা আর থাকছে না। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না। জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সৌদি আরব ও ইউএইর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা হচ্ছে।

মূলত ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ’ তৈরি করাই ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ইরানের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে সৌদি আরব ও ওপেকভুক্ত অন্য দেশগুলো জ্বালানি তেলের বাজারে সৃষ্ট বাড়তি চাপ সামলাতে সক্ষম হবে।

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্বালানি সম্পদবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ফ্যানন বলেছিলেন, ইরানের রফতানি যত দ্রুত সম্ভব শূন্যে নামিয়ে আনাই আমাদের (ট্রাম্প প্রশাসন) মূল লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *