অস্ট্রেলিয়ার এলএনজি রফতানির স্বপ্ন
গত বছরের নভেম্বরে কাতারের চেয়েও বেশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানি করে অস্ট্রেলিয়া। এই প্রথম কোনো দেশ বিশ্বে এলএনজি রফতানিতে কাতারকে ছাড়িয়ে যায়।
এলএনজি রফতানিতে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছতে কয়েক বছর বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। উত্তোলনক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক হতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশটি। ফলাফল হিসেবে দেশটিতে উৎপাদন ও উত্তোলন দুটোই বাড়ছে। কিন্তু এই অস্ট্রেলিয়াতেই বর্তমানে গ্যাস সংকট চলছে, যা দেশটির এলএনজি রফতানিতে শীর্ষ হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর রয়টার্স।
অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়ভাবে গ্যাস সংকট সৃষ্টি হওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার এলএনজি সক্ষমতার যতটুকু কাজে লাগানো হয়েছে, তার পুরোটাই ছিল রফতানিকে উদ্দেশ্য করে।
গত বছর আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এলএনজি রফতানি বৃদ্ধির ফলে অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বাজারে সরবরাহ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের অপর্যাপ্ততা অতিদ্রুত সমাধান করতে হবে এবং স্থানীয় চাহিদা ও এলএনজি রফতানির মধ্যে সফল সহাবস্থান তৈরিতে স্বচ্ছতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় অস্ট্রেলিয়ায় গ্যাসের ঘাটতির পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে। আর তা হচ্ছে, এখানে মজুদকৃত গ্যাসের বিষয়ে অতিরিক্ত অনুমান। অর্থাৎ বাস্তবিক অর্থে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে, তার চেয়ে বেশি থাকার ধারণা করা। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এনার্জিকোয়েস্টের পক্ষ থেকে গত মাসে সতর্ক করে বলা হয়, কুইন্সল্যান্ডকে তাদের ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূল্যমানের এলএনজি সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশই কমিয়ে ফেলতে হবে। কারণ প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘২০২৫ সাল নাগাদ সবচেয়ে কঠিন সময়টি আসবে। তখন গ্লাডস্টোন এলএনজির পরিচালকদের ওপর স্থানীয় বাজারে গ্যাস সরবরাহের সম্ভাব্য রাজনৈতিক চাপ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল কুইন্সল্যান্ডে নেয়া নতুন একটি প্রকল্প ঘিরে গ্যাস সংকট সমাধানে আশার সঞ্চার হয়েছে। কুইন্সল্যান্ডে কুইন্সল্যান্ড কর্তৃপক্ষ গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো একটি বড় এলএনজি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। অ্যাংলো-ডাচ বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেল এবং চীনভিত্তিক পেট্রোচায়নার এ যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সুরাট বেসিনে সঞ্চিত তিন ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করা হবে।
তবে এ প্রকল্প অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাষ্ট্রগুলোর গ্যাস সংকটের কোনো সুরাহা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ কুইন্সল্যান্ড থেকে এ অঞ্চলগুলোয় গ্যাস সরবরাহ করা খুবই ব্যয়বহুল।
রয়টার্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় মোট পাঁচটি এলএনজি আমদানি প্রকল্প নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে চালু হবে, যার মাধ্যমে বাজারে ৩০০ কোটি ডলার সমমূল্যের ৭৮ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে এ আমদানি প্রকল্পের সমালোচকরা বলছেন এটি অতিরিক্ত। রয়টার্সের প্রতিবেদনে ক্রেডিট সুইসের বিশ্লেষক সাউল কাভোনিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এ পাঁচ প্রস্তাবের মাধ্যমে বলা যায়, অস্ট্রেলিয়া এখন এলএনজি রফতানিতে অতিসক্ষমতা তৈরির প্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত আমদানি সক্ষমতা তৈরি করছে।’
উড ম্যাকেঞ্জির এশিয়া গ্যাস অ্যান্ড এলএনজির পরিচালক নিকোলাস ব্রাউন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই দেখব একটি টার্মিনাল পূর্ব উপকূলীয় বাজারে আরেকটি গ্যাসের আরেকটি উেসর জোগান দেবে। ২০২০-২৯ সালের মাঝামাঝির শেষ সময় পর্যন্ত একটি টার্মিনালই চাহিদার পর্যাপ্ত জোগান দেয়ার জন্য যথেষ্ট।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারও পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করছে না যে, তাদের আরো আমদানি সক্ষমতা প্রয়োজন। এমনকি আমদানি টার্মিনালেরও কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না তারা; অন্তত গত বছর পর্যন্ত তাদের মনোভাব যে এমনই ছিল তা নিশ্চিত। কারণ সে সময় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্রগুলোয় গ্যাস ঘাটতির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছিল এবং ২০৩০ সালের আগে কোনো ঘাটতি হবে না বলেও আশা করছে তারা।
অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ সালের আগেই চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও সাশ্রয়ী দামে এলএনজি আমদানি ক্রমে কঠিন হয়ে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাজারে আরো গ্যাসের জোগান দিতে উৎপাদকদের চাপ দিতে পারে সরকার। এর ফলে রফতানি কমে আসবে এবং সংকুচিত হবে রফতানি রাজস্ব।