দাম বাড়তে শুরু করেছে ছোলার
রোজা শুরু হতে ২০ দিনের মতো বাকি। এরই মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে ছোলার দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহেই পণ্যটির দাম মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে।
রোজায় বাড়তি চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা ছোলার পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলেছেন। এর পরও রোজা শুরুর আগেই দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, ছোলার এ মূল্য বৃদ্ধি সাময়িক। আমদানি পর্যাপ্ত হওয়ায় আগামী রোজায় ছোলার বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
দেশের বাজারে অস্ট্রেলিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকেও পণ্যটি আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ভালো মানের ছোলা ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। গত সপ্তাহের শুরুতে পণ্যটি মণপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এক সপ্তাহেই এ ছোলার দাম মণে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা মাঝারি মানের ছোলা মণপ্রতি ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৫০ টাকায়। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ ছোলার দাম বেড়েছে মণে ১৫০ টাকা। রোজার আগে বাজারে মাঝারি মানের ছোলার বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। এ কারণে পণ্যটির দামও তুলনামূলক বেশি বেড়েছে।
রোজায় বাড়তি চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ছোলা বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন। এ ছোলা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সরবরাহ তুলনামূলক বেশি থাকায় পণ্যটির দামও স্থিতিশীল রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজায় বাড়তি চাহিদার চাপ সামলাতে দেশের বাজারে আগেভাগেই পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ছোলা এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে ছোলার দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পরও পাইকারি পর্যায়ে পণ্যটির দাম মণে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। এটা আমদানিকারক ও বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারণে ঘটছে। তারা বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় পণ্যটির দাম বাড়াতে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন।
রোজার আগে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত ছোলা আমদানির তথ্য নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের বাজারে সব মিলিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৫ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। চলতি মাসে আরো ৭০-৮০ হাজার টন আমদানীকৃত ছোলা পাইপলাইনে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে সমুদ্রপথে ও মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ছোলা আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
প্রতি বছর রোজার সময় দেশে ছোলার চাহিদা বেড়ে যায়। তবে পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা কোনোভাবেই ১ লাখ ৫০ হাজার টন ছাড়িয়ে যায় না। সেই হিসাবে চাহিদার অতিরিক্ত ছোলা আমদানি হয়েছে। তাই সরবরাহ সংকটের অজুহাতে পণ্যটির দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
চট্টগ্রাম ডাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মহিউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ছোলার দাম বেশি। তাই দেশের পাইকারি বাজারেও আমদানি করা ছোলার দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। এটা সাময়িক। আগামী দিনগুলোয় পণ্যটির দাম কমে আসবে।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, প্রতি বছর রোজার সময় ছোলার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এবারো রোজা শুরুর আগেই ছোলার দাম বাড়ছে। পণ্যটির বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করতে হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, রোজাকে কেন্দ্র করে খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি কাম্য নয়। শিগগিরই জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম কাজ শুরু করবে। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবণতা কিংবা সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।