জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়াতে পারে ওপেক

চলমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জের ধরে ভেনিজুয়েলা ও ইরান থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়ছে জ্বালানি পণ্যটির দামে।

ধীরে ধীরে বাড়ছে দাম। আগামী দিনগুলোয় সরবরাহ কমে দাম বর্তমানের তুলনায় আরো বেড়ে গেলে জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন বাড়িয়ে দিতে পারে রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দিতে পারে রাশিয়াও। ওপেক সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়ে ওপেকের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ‘কৃত্রিমভাবে’ কমিয়ে রেখেছে ওপেক ও রাশিয়া।

মূলত ওপেকের আওতায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন হ্রাসসংক্রান্ত চুক্তির সমালোচনা করে ট্রাম্প বিভিন্ন সময় টুইট করেছেন। ওপেকের সদস্য না হয়েও বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাশিয়াও এ চুক্তির শর্ত মেনে চলছে।

রাশিয়া ও ওপেকের এ সম্মিলিত উদ্যোগের জের ধরে রেকর্ড দরপতনের কবল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার। তবে দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এতেই আপত্তি ট্রাম্পের। তার মতে, বাজার স্থিতিশীলতা আনার নামে এটা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির প্রচেষ্টা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের নভেম্বরে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ট্রাম্প। পরবর্তী সময়ে ভেনিজুয়েলার ওপরও আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা। এসব নিষেধাজ্ঞা দেশ দুটির জ্বালানি তেল রফতানি খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ইরান ও ভেনিজুয়েলা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি কয়েক গুণ কমে গেছে। এমন পরিস্থিতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭২ ডলারের আশপাশে অবস্থান করতে পারে। তবে ইরান ও ভেনিজুয়েলা থেকে সরবরাহ কমে আসার কারণে জ্বালানি পণ্যটির দাম অতিরিক্ত পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাজার পরিস্থিতি বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠলে আসছে জুলাই থেকে রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ওপেকভুক্ত দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন বর্তমানের তুলনায় বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে বাজারে জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ বেড়ে দাম কমে আসবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওপেকের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেন, সরবরাহ সংকটের জের ধরে চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৮৫ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ভারসাম্য ফেরাতে ওপেক অবশ্যই ভূমিকা রাখবে। রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে জোটভুক্ত দেশগুলো উত্তোলন বাড়িয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, চলতি বছরের জুন নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮২ ডলার হতে পারে বলে মনে করছে ওপেক। পরবর্তীতে তা বেড়ে ৮৫ ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আগামী ২৫-২৬ জুন বৈঠকে বসতে পারে ওপেকভুক্ত দেশগুলো।

উৎপাদন কমেছে ভেনিজুয়েলায়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে চরম সংকটের মুখে পড়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল খাত। চলতি বছরের মার্চে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। প্রধান রফতানি পণ্য জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমায় দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চে ভেনিজুয়েলার নিজস্ব কূপগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল কম। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় উত্তোলন কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ১০ লাখ ব্যারেলের নিচে নেমে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *