এলপিজি ব্যবহারে দ্বিতীয় শীর্ষ ভারত

বিশ্বের মধ্যে ভারত এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারকারী দেশ। আগামী দিনগুলোয় এখানে এলপিজির চাহিদা আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশটির তেল মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএম কুট্টি জানিয়েছেন, ২০২৫ সাল নাগাদ এলপিজির চাহিদা ৩৪ শতাংশ বাড়বে। মূলত রান্নার কাজে প্রতিটি পরিবারে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহে সরকারের গৃহীত প্রকল্পই দেশটিতে এলপিজির চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ। খবর ইকোনমিক টাইমস।

এশিয়া এলপিজি সামিটে ভারতের তেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সক্রিয় বা সব সময় এলপিজি ব্যবহার করে এমন ভোক্তার সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৮০ লাখ। গত অর্থবছর (২০১৭-১৮) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ। তেল মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ এলপিজির ব্যবহার বেড়ে ৩ কোটি ৩ লাখ টনে পৌঁছাবে এবং ২০৪০ সাল পর্যন্ত তা আরো বেড়ে হবে ৪ কোটি ৬ লাখ টন।

দেশজুড়ে এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের মধ্যে বিনামূল্যে এলপিজি গ্যাস সংযোগ প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর উজ্জ্বল যোজনা (পিএমইউওয়াই) প্রকল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে গ্রামীণ অঞ্চলের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।

কারণ গ্রামে রান্নার কাজে জ্বালানি কাঠ, কয়লা, গোবরের মতো গতানুগতিক জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০১৬ সালের মে মাসে চালু হওয়ার পর পিএমইউওয়াই প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি ৩১ লাখ পরিবারে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। সরকারের উদ্যোগই মূলত ভারতে এলপিজির চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ।

এমএম কুট্টি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পিএমইউওয়াই প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের ৩১ মার্চের আগেই আমরা আট কোটি পরিবারে এলপিজি সংযোগ দেব।’

একই সম্মেলনে তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানান, বর্তমানে দেশে ৯০ শতাংশ এলপিজি গ্যাস ব্যবহূত হয়, ২০১৪ সালে যা ছিল ৫৫ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২০ সালের মধ্যে আট কোটি পরিবারে এলপিজি সংযোগ প্রদানের লক্ষ্য পূরণে দৃঢ় আশাবাদী আমরা।

এদিকে ভর্তুকিযুক্ত এলপিজির জন্য অনেকেই মিথ্যা পরিচয় দিয়ে নিবন্ধন করিয়ে থাকে। এ ধরনের নকল ও ভুয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমাতে ব্যবহারকারীর ব্যাংক হিসাবে সরাসরি এলপিজি ভর্তুকি পাঠানো শুরু করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৬২৫ কোটি রুপি ব্যবহারকারীদের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের আওতায় এলপিজি সিলিন্ডারে সরাসরি ভর্তুকি দেয়া হয় না। বরং তা বাজারমূল্য অনুযায়ীই বিক্রি করা হয় এবং ক্রেতার পাওনা ভর্তুকি তার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ স্কিমের আওতায় সরকারের এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার কোটি রুপি অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।

তবে এ প্রকল্প পরিচালনা করতে গিয়ে সরকারের আর্থিক বোঝা আরো ভারী হয়ে উঠছে। পিএমইউওয়াইয়ের আওতায় দরিদ্র পরিবারে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ফুয়েল রিটেইলারদের ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে। আর এজন্য প্রতিটি সংযোগের জন্য এ খুচরা বিক্রেতারা সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ রুপি করে পেয়ে থাকে। দিনে দিনে এ সংযোগের চাহিদা বাড়ছে।

এর সঙ্গে এলপিজি বাবদ ভর্তুকির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেলের (পিপিএসি) সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এলপিজির চাহিদায় রেকর্ড ১১ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। এ অবস্থায় গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২৩ শতাংশ বেশি ভর্তুকি দিতে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

গত সপ্তাহে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি) সিলিন্ডারপ্রতি এলপিজির দাম ২ দশমিক ৮ রুপি করে বাড়ানো হয়। আর ভর্তুকিপ্রাপ্ত এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫০ রুপি করে। দিল্লিতে এখন ভর্তুকিপ্রাপ্ত সিলিন্ডার বিক্রি হয় ৪৯৫ রুপিতে এবং ভর্তুকিবিহীন সিলিন্ডার ৭০১ দশমিক ৫০ রুপি করে। বছরে ১০ লাখ রুপির কম উপার্জন করে এমন পরিবার ভর্তুকিসহ ১২টি সিলিন্ডার কিনতে পারে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এলপিজির গ্রাহক দ্রুত বাড়ছে। ফলে সরকারকে এলপিজি ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি ভাবতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *