কে এই হামলাকারী?

গাড়ির পেছনে রাখা স্বয়ংক্রিয় শটগান ও রাইফেল। এর মধ্যে দুইটিই অস্ত্র হাতে নেন। সেটা নিয়েই হেঁটে হেঁটে প্রধান ফটক দিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকেন। এসময় মসজিদের ভেতরে প্রবেশ গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন একজন। প্রথমে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গেটের সামনেই পড়ে যায় লাশ।

এরপর ভেতর ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকেন ওই ব্যক্তি। গুলিতে মানুষের লাশ পড়তে থাকে। বাঁচার জন্য আত্মচিৎকার করতে থাকে মানুষ। মারা যাওয়ার আগে গোঙানির আওয়াজ শুনা যায়। গুলি শেষ হয়ে গেলে আবারো গুলি লোড করেন হামলাকারী।

শুধু তাই নয়, ওই হামলাকারী ঘুরে ঘুরে লাশের উপরও গুলি চালাতে থাকেন। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় উঠে সেখানেও নির্বিচারে গুলি চালান। এমনই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্যের অবতারণা হয় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়রত মুসলিমদের উপর ওই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবশেষ তিন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। হামলার সময় তিনশ মুসল্লি মসজিদে ছিলেন বলে জানা যায়। তবে সংখ্যাটি নিশ্চিত নয়।

গুলি করার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে ছিলেন হামলাকারী। ১৭ মিনিট ধরে ওই হামলার লাইভ ভিডিও প্রচারিত হয়। হামলাকারী ক্যামেরাটা তার মাথার সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন। তার অস্ত্রগুলোর ওপরে সাদা রঙে কিছু লেখাও ছিল।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এভাবে মানুষ হত্যাকারী ব্যক্তিটি আসলে কে? কেনই বা তিনি এমনটি করলেন?

দ্যা টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, হামলাকারী নিজেকে ব্রেনটন ট্যারেন্ট বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। ২৮ বছর বয়সী একজন শ্বেতাঙ্গ।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া নাগরিক। তিনি কট্টর ডানপন্থী।

এক্সপ্রেস নামে নিউজিল্যান্ডের একটি গণমাধ্যমে বলা হয়, ওই হামলাকারী অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। দুই বছর ধরে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করছেন। হামলাকারী জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বিদেশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এ হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি।

হামলার আগে ৭৩ পাতার টুইটারে একটি ইশতেহার আপলোড করেন ওই হামলাকারী। সেখানে তিনি এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে দাবি করেন। এ ছাড়া অভিবাসনের বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা জানান। তাই নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলে উল্লেখ করেন।

অভিবাসীবিদ্বেষী এ হামলাকারী তার ইশতেহারে বলেছেন, হামলা করে তিনি অভিবাসীদের দেখাতে চান যে, আমাদের ভূমি কখনও তাদের ভূমি হবে না। যতক্ষণ শ্বেতাঙ্গরা জীবিত থাকবেন।

তিনি আরো লিখেছেন, তিনি মুসলমান এবং ধর্মত্যাগীদের ঘৃণা করেন। ধর্মত্যাগকারীদের তিনি রক্তের সঙ্গে প্রতারণাকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।

নিজের লেখা ওই ইশতেহারে ব্রেনটন জানিয়েছেন, তিনি নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিজের পরিবারের লোকজনের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই ইউরোপের মাটিতে সরাসরি অভিবাসীদের সংখ্যা কমাতেই তিনি এই হামলা চালিয়েছেন। একই সঙ্গে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

হামলাকারী বলেন, আমি ২০১১ সালে নরওয়ের ওসলোতে ৭৭ জনকে হত্যাকারী অ্যান্ডারর্স ব্রেইভিকসহ অন্যান্য বন্দুক হামলাকারীদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। এছাড়া ডায়লান রুফসহ আরও অনেকের লেখা আমি পড়েছি। তবে নাইট জাস্টিসিয়ার ব্রেইভিকের কাছ থেকেই হামলার উৎসাহ পেয়েছি।

এ হামলার ঘটনায় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থক ক্যানডিস ওউনসের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসলিমদের উপর নৃশংস হামলা চালান ওই বন্দুকধারী। পরে কাছাকাছি শহরতলি লিনউডের মসজিদে হামলা চালানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়, হামলাকারী একাধিক ছিলেন। হামলায় জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ চারজনকে পুলিশ আটক করেছে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডেন বলেছেন, হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব না হলেও আমি এটা বলতে পারি যে, এটি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের কলঙ্কময় দিনগুলোর একটি। নিশ্চিত ভাবেই পরিকল্পনা করে এ হামলা চালানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *