ওয়াশিংটনের কাছে বাড়তি সময় চায় দিল্লি
ইরান থেকে রফতানি হওয়া অপরিশোধিত জ্বালানির তেলের অন্যতম ক্রেতা ভারত। গত নভেম্বরে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে জ্বালানি পণ্যটির আমদানিতে সমস্যায় পড়ে ভারত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতসহ আটটি দেশকে ইরানি জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়।
এ ছাড় মেনেই নভেম্বরের পর থেকে তেহরানের কাছ থেকে জ্বালানি তেল কিনেছে দিল্লি। এখন ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াতে আগ্রহী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এজন্য ওয়াশিংটনের কাছে বিদ্যমান ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি তুলতে যাচ্ছে দেশটি।
ভারতের জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাতে এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। এমন এক সময় ভারতের এ মনোভাবের খবর প্রকাশ পেল, যখন দিল্লির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কঠোর বাণিজ্যনীতি প্রয়োগের সম্ভাবনার কথা জানা গেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির পর ভারত ইরানের কাছ থেকে মাসে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন বা দৈনিক গড়ে তিন লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আটটি দেশের জন্য ঘোষণা দেয়া বিশেষ ছাড়ের আওতায় ভারতের জন্য এ পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল।
চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে বিশেষ এ সুবিধা পাবে ভারত। জুনের শুরুতে গিয়ে বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে ইরান থেকে ভারতীয় আমদানিকারকদের জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে মে মাসের পরও ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে চায় ভারত।
প্রয়োজনে আমদানির পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় বাড়ানোর আগ্রহ রয়েছে দেশটির। এ কারণে ইরানি জ্বালানি তেল আমদানিতে বিদ্যমান ছাড়ের সময়সীমা বাড়াতে ওয়াশিংটনের কাছে দাবি তুলবে দিল্লি। এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় জ্বালানি মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এনার্জি ব্যুরোর মুখপাত্র ভিনসেন্ট ক্যাম্পস বলেন, ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে আটটি দেশকে দেয়া ছাড়ের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আসেনি।
ভবিষ্যতে ভারত সরকার এমন কোনো প্রস্তাব দিলে পারস্পরিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে তা পর্যালোচনা করা হতে পারে। এ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে আমরা (মার্কিন প্রশাসন) আশা করছি, ভারতসহ সব দেশই তেহরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনবে।
এমন এক সময় রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করল, যখন ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্যমান বাণিজ্যনীতি আরো কঠোর করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে বেশকিছু ভারতীয় পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পেয়ে আসছে।
এ সুবিধার আওতায় প্রতি বছর দিল্লি মার্কিন বাজারে ৫৬০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে। এখন ভারতের ওপর থেকে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা বাতিল করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি পেতে যেসব মানদণ্ড রয়েছে, তা শতভাগ পূরণে ব্যর্থ হয়েছে নয়াদিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে ভারতের হস্তশিল্প, কৃষিপণ্য, জাহাজের যন্ত্রাংশসহ কয়েকটি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে ট্রাম্পের এমন কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যে বিদ্যমান শুল্কহার বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আমদানি কমিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইরানি জ্বালানি তেলের অন্যতম ক্রেতা দক্ষিণ কোরিয়া। তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় গত বছরের শেষদিকে দক্ষিণ কোরিয়া দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন আমদানি প্রক্রিয়া নতুন করে চালু হলেও পরিমান কমিয়ে দিয়েছে সিউল।
গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরীয় আমদানিকারকরা ইরান থেকে সাকল্যে ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৪১ টন বা দৈনিক গড়ে ৫৩ হাজার ৬৭৬ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। ২০১৮ সালের একই সময় ইরান থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯ লাখ ৫০ হাজার ১৩ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছিল।