স্যাটেলাইটের ছবিতে অক্ষত বালাকোট

পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের যে প্রশিক্ষণ শিবিরে ভারত বোমা হামলা চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে আসছে সেখানে জইশ পরিচালিত মাদ্রাসা ভবন এখনও ‘অক্ষত’ দাঁড়িয়ে আছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মঙ্গলবার উচ্চ রেজ্যুলুশনের স্যাটেলাইট ছবি পর্যালোচনা করে তারা এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক জঙ্গি হামলায় ৪৬ জন ভারতীয় সেনা নিহতের পর পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ এর দায় স্বীকার করে নেয়। এর পর ২৬ ফেব্রুয়ারি জইশ-ইমোহাম্মদের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যুদ্ধবিমান থেকে ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করে বহু জঙ্গিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে আসছে ভারত।

খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক বেসরকারি স্যাটেলাইট অপারেটর প্ল্যানেট ল্যাব ইনকর্পোরেটেডের সরবরাহ করা ছবিগুলোতে ভারতের বোমা হামলার ছয় দিন পর ৪ মার্চ ওই মাদ্রাসার স্থানটিতে অন্তত ছয়টি ভবন দেখা গেছে।

ওই হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো স্যাটেলাইট ছবি পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্ল্যানেট ল্যাবের ওই ছবিগুলোতে (যেগুলো ৭২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছোট জিনিসও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে) ভারত সরকার যেখানে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছে সেখানে পরিষ্কারভাবে ওই কাঠামোগুলো দৃশ্যমান হয়েছে।

খবরে আরো বলা হয়েছে, এই ছবিগুলোর সঙ্গে ২০১৮ সালের এপ্রিলে গ্রহণ করা স্যাটেলাইট ছবিগুলোর তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ভবনগুলোর ছাদে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো কোনো ছিদ্র নেই, দাহ্য পদার্থের আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই, বিস্ফোরণের ধাক্কায় উড়ে যাওয়া কোনো দেয়াল নেই, মাদ্রাসার আশপাশে উপড়ে পড়া কোনো গাছ নেই এমনকি বিমান হামলার অন্য কোনো চিহ্নই নেই।

ফলে এই ছবিগুলো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের দাবির বিষয়ে আরও সন্দেহ তৈরি করেছে। একইসঙ্গে সরকারকে বেশ বিব্রত করছে। কারণ গত আট দিন ধরে তারা দাবি করে আসছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতের ওই বিমান হামলায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহর ও জাবা গ্রামের কাছে ওই মাদ্রাসাস্থলের সব লক্ষ্যস্থলগুলোতে আঘাত হানা হয়েছে এবং এখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।

স্যাটেলাইট ছবিতে যা দেখা গেছে এবং এসব ছবি তাদের সরকারি বিবৃতিকে দুর্বল করে দিবে কি না সে বিষয়ে গত কয়েকদিন ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইমেইলে প্রশ্ন করা হলেও তারা কোনো জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এদিকে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার জওয়ানদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়নি বলে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বলেন, জওয়ানের রক্ত নিয়ে ভোটে জিতবে, এটা হতে দেওয়া যায় না।

তিনি আরো বলেছেন, বিজেপি পার্টিটাকেও মোদি-অমিত শাহ (বিজেপি সভাপতি) প্রাইভেট কোম্পানি করে দিয়েছে। সবাইকে ভয় দেখিয়ে, চোখ রাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। যে সমালোচনা করছে তাদেরকেই পাকিস্তানি, দেশদ্রোহী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *