সয়াবিন তেলের নির্ভরযোগ্য উৎস রাশিয়া

বৈশ্বিক জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের বাজারে রাশিয়া একটি নির্ভরযোগ্য নাম। গম, ভুট্টা থেকে শুরু করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিতে রাশিয়া নিজের অবস্থান অনেক আগেই পোক্ত করেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণেও দেশটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

সে তুলনায় ভোজ্যতেলের বাজারে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে দেশটি। বিশেষত সয়াবিন তেল উৎপাদক ও রফতানিকারক হিসেবে এতদিন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মস্কোর প্রভাব ছিল সামান্যই। তবে সয়াবিন তেলের বাজারে এরই মধ্যে নিজের অবস্থান জোরদার করেছে রাশিয়া। উৎপাদন খাতে দেড় দশকের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির জের ধরে ২০১৮ সালে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সয়াবিন তেল রফতানি করেছে রাশিয়া।

রুশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, আলজেরিয়া, মিসরসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো সয়াবিন তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এ কারণে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সয়াবিন তেলের রফতানি বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রুশ প্রশাসন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী দিনগুলোয় রাশিয়া থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানি বর্তমানের তুলনায় আরো বাড়িয়ে বছরে ১০ লাখ টনের ওপরে নিয়ে যাওয়া হবে।

মস্কোভিত্তিক কৃষি পণ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সবইকন জানাচ্ছে, চলতি শতকের শুরু থেকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় সয়াবিন তেল উৎপাদন ও রফতানি খাতের উন্নয়ন ঘটিয়েছে রাশিয়া। দেশটির ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়া সয়াবিন উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সয়াবিন উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

ফলাফল হিসেবে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদনে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। কাঁচামালের বাড়তি উৎপাদনের কারণে ও রফতানিমুখী শিল্পের বিকাশে সয়াবিন তেলের উৎপাদনেও টানা ১৫ বছর প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে দেশটি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় উৎপাদিত সয়াবিন তেলের সিংহভাগ রফতানির মধ্য দিয়ে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান অনেকটাই জোরদার করে পণ্যটির নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে রাশিয়া।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মতো আমদানিকারক দেশগুলোর কাছে সয়াবিন তেলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠছে রাশিয়া। খবর এগ্রিমানি ও এজিওয়েব।

২০১৭ সালে দেশটিতে মোট ৮ লাখ ২৪ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রাশিয়ায় ভোজ্যতেলটির উৎপাদন বেড়েছে ৭২ হাজার টন। এর মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছরে রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ।

প্রতি বছর উৎপাদিত সয়াবিন তেলের সিংহভাগই রফতানি করে রাশিয়া। ভোজ্যতেলটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় রাশিয়া ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের পর থেকে রাশিয়ার সয়াবিন তেল রফতানি খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। ওই বছর দেশটি থেকে আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে সাকল্যে ১ লাখ ২৯ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল।

২০১৮ সালে এসে রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছে। বিদায়ী বছরে রুশ রফতানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার টন সয়াবিন তেল রফতানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে ভোজ্যতেলটির রফতানি বেড়েছে ১৭ লাখ টন।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে রাশিয়াকে বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালের পর থেকে রাশিয়ায় সয়াবিন তেল উৎপাদনে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।

ওই বছর দেশটিতে সাকল্যে ৬৪ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছিল। দেড় দশকের টানা প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০১৮ সালে রাশিয়ায় ভোজ্যতেলটির উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *