জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ৭ লাখ ব্যারেলের নিচে নামবে

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম তুলনামূলক কম থাকা, অর্থনৈতিক দুর্বলতা, বিনিয়োগস্বল্পতা—এমন নানা কারণে ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল খাত আগে থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল। কয়েক বছর ধরে দেশটির কূপগুলো থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমতির দিকে ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের জের ধরে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ব্যাপক গণআন্দোলন। এ আন্দোলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদুরোকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে হটাতে ভেনিজুয়েলার তেল খাতের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর প্রভাবে দেশটির জ্বালানি তেল খাতের চ্যালেঞ্জ আরো জোরদার হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জ্বালানিবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান র্যাস্টাড এনার্জি জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে আগামী বছর নাগাদ ভেনিজুয়েলায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় উত্তোলন সাত লাখ ব্যারেলের নিচে নেমে আসতে পারে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

নরওয়েভিত্তিক র্যাস্টাড এনার্জির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনিজুয়েলার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে কয়েক বছর ধরে চলমান মন্দাভাবের ধারাবাহিকতা আগামী বছরগুলোতেও দেখা যেতে পারে। বিশেষত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জের ধরে দেশটির কূপগুলো থেকে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন আরো কমতে পারে।

২০১৮ সালে ভেনিজুয়েলায় প্রতিদিন গড়ে ১৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে। চলতি বছর শেষে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় উত্তোলন আগের বছরের তুলনায় আরো ২০ শতাংশ কমে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেলে নেমে আসতে পারে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে আগামী বছর নাগাদ দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক উত্তোলন ৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল থেকে ৮ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেলের মধ্যে নেমে আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির জ্বালানি বিশ্লেষক পাওলো রদ্রিগেজ-মাসিউ বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ভেনিজুয়েলার প্রধান রফতানি পণ্য। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম তুলনামূলক কম থাকা ও উত্তোলন খাতের মন্দাভাব ভেনিজুয়েলা থেকে জ্বালানি তেল রফতানি কমিয়ে দিয়েছে।

ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেল খাতের ওপর ভর করে অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট মাদুরো। এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল খাতে বিদেশী বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ হয়ে আসবে। ফলে দেশটির জ্বালানি তেল খাতের চ্যালেঞ্জ আরো জোরদার হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে ভবিষ্যতে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ৬৩ ডলার শূন্য ৭ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক নাগাদ (এপ্রিল-জুন) ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম বেড়ে দাঁড়াতে পারে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ ডলার ৫০ সেন্টে। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ঘটনা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে এর প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি। বরং জ্বালানি তেলের বাজারে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে ভেনিজুয়েলা পরিস্থিতি।

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে ভেনিজুয়েলা থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমে আসতে পারে। একই সঙ্গে ওপেকভুক্ত দেশগুলো নিজস্ব কূপ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনবে।

এ দুইয়ের প্রভাবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বর্তমানের তুলনায় বাড়তি থাকতে পারে বলে মনে করছে গোল্ডম্যান স্যাকস।

আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের বিশ্লেষক হেলিমা ক্রফট বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা ভেনিজুয়েলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর জের ধরে চলতি বছর দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন তিন থেকে পাঁচ লাখ ব্যারেল কমতে পারে।

তার ওপর রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আগামী বছরগুলোয় ভেনিজুয়েলায় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন আরো কমাতে পারে। ফলে দেশটিতে বিদ্যমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *