চাল রফতানিতে গুরুত্ব হারাচ্ছে কলকাতা
ভারতের চাল উৎপাদক ও রফতানিকারক রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন এ রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়। পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এসব চালের বড় একটি অংশ রফতানি হয়।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে মূলত সমুদ্র ও স্থল এ দুই পথে চাল রফতানি হয়। সমুদ্রপথে চাল রফতানির প্রধান কেন্দ্র কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর। তবে এ দুটি বন্দর ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সমুদ্রপথে চাল রফতানি কমে আসছে। গত দুই বছরেই কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর দিয়ে খাদ্যপণ্যটির রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এর পেছনে চালের রফতানি চাহিদা কম থাকার পাশাপাশি এ দুটি বন্দরের দুর্বল অবকাঠামো ও বছরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ে নাব্যতা সংকটকে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর বিজনেস লাইন।
ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পশ্চিমবঙ্গের রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ১০ লাখ ৪০ হাজার টন চাল রফতানি করেছিল। খাদ্যপণ্যটি রফতানি করে এ সময় তাদের আয় দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপিতে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন চাল কলকাতা ও হলদিয়া এ দুটি বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে রফতানি হয়েছিল। বাকি চাল সড়কপথে বাংলাদেশে রফতানি করেছে পশ্চিমবঙ্গের রফতানিকারকরা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে চাল রফতানি আরো বেড়ে ১২ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর দিয়ে চাল রফতানি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার টনে।
গত বছরের ১ এপ্রিল শুরু হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর দিয়ে সাকল্যে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে। সে হিসাবে দুই বছরে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সমুদ্রপথে চাল রফতানি অর্ধেক কমেছে।
পশ্চিমবঙ্গের চাল রফতানি খাতে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের গুরুত্ব কমে আসার পেছনে দুটি কারণ চিহ্নিত করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। প্রথমত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় ধান-চালের বাম্পার ফলন হয়েছে।
ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যটির রফতানি চাহিদা আগের তুলনায় কমে গেছে। চাহিদা তুলনামূলক কম থাকার জের ধরে পশ্চিমবঙ্গের চাল রফতানি খাতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের দুর্বল অবকাঠামো ও নাব্যতা সংকট। এ বিষয়ে কলকাতাকেন্দ্রিক তিরুপতি এগ্রি ট্রেডের সিইও সুরজ আগরওয়াল বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এ চার মাসে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি হয়। তবে শীতকাল হওয়ায় এ সময়টায় পানি কমে গিয়ে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের পোতাশ্রয় অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে আসে।
দেখা দেয় নাব্যতা সংকট। ফলে শুরুতে ছোট জাহাজে করে চাল বড় জাহাজে নিয়ে গিয়ে তারপর রফতানি করতে হয়। একই সঙ্গে অবকাঠামো সংকটের কারণে এ দুই বন্দরে জাহাজগুলোকে পণ্য খালাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে পণ্যের রফতানি ব্যয় বেড়ে যায়। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের রফতানিকারকরা কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর দিয়ে চাল রফতানিতে আগ্রহ হারাতে শুরু করেছেন।
এ সমস্যা সমাধানে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ওয়্যারহাউজের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কলকাতার চাল রফতানিকারকরা। একই সঙ্গে ভারত থেকে চাল রফতানির নতুন বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। ভারতের ইতিহাসে এটাই চাল রফতানির সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৭ সালে দেশটি থেকে মোট ১ কোটি ২২ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছিল। ভারত থেকে রফতানি হওয়া চালের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জোগান দেয় পশ্চিমবঙ্গ।