সর্বনিম্নে ইরানের জ্বালানি রফতানি

বিদায়ী বছরের নভেম্বরের শুরুতে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এর আগে থেকেই ওয়াশিংটনের প্রভাবে ইরান থেকে জ্বালানি তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছিল এশিয়ার দেশগুলো।

পরবর্তী সময়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ইরানের জ্বালানি তেল রফতানিতে। গত বছর চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত—এ চারটি এশীয় দেশে ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমে গেছে।

এর মধ্য দিয়ে প্রধান রফতানি বাজার এশিয়ার এ চারটি দেশে ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি খাতে বিদ্যমান এ মন্দাভাবের পেছনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরজুড়ে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি খাতে এমন মন্দাভাব বজায় থাকলে ইরানের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। খবর রয়টার্স, ব্লুমবার্গ ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

ইরানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ইরান থেকে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত—এ চার দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৩ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কম।

বিগত তিন বছরের মধ্যে এটিই এশিয়ার প্রধান চার ক্রেতা দেশে ইরানের সবচেয়ে কম অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির রেকর্ড। এর আগে ২০১৫ সালে ইরান থেকে এশিয়ার এ চারটি দেশে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি রেকর্ড পরিমাণ কমেছিল। ওই সময়ও দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চলছিল।

গত নভেম্বরে তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে ওয়াশিংটন। এর আগে থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। চীন, জাপান ও ভারত ইরানি জ্বালানি তেল কেনা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কমিয়ে দেয়।

ফলে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি খাত চাপের মধ্যে পড়ে যায়। নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞা নতুন করে কার্যকর হলে আটটি দেশ ইরানের সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্যে বিশেষ ছাড় পায়। এ তালিকায় চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত রয়েছে।

এর জের ধরে বছরের একদম শেষ সময়ে এসে চীন ও ভারত ইরান থেকে জ্বালানি তেল কেনা বাড়িয়ে দেয়। আর চলতি বছরের শুরুতে ইরানের সঙ্গে নতুন করে জ্বালানি বাণিজ্য শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে এর পরও বিদায়ী বছরে উভয় পক্ষের জ্বালানি বাণিজ্যে মন্দাভাব এড়ানো সম্ভব হয়নি।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর তালিকায় ইরানের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি তেল রফতানি হয়। জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দেশটি ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।

ইরানের জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এশিয়ার দেশগুলো। বিশেষত চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত—এ চারটি দেশ ইরান থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল ও কনডেনসেট কিনে থাকে। এ কারণে উল্লিখিত চার দেশে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি কমে যাওয়াটা ইরানি অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জিং বিবেচনা করা হয়।

এনার্জি আসপেক্টসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ রিকার্ডো ফাবিয়ানি বলেন, ইরানের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগের জন্যই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিষেধাজ্ঞার মুখে গত বছর ইরান থেকে এশিয়ার প্রধান চার ক্রেতা দেশে জ্বালানি তেলের রফতানি কমায় এ উদ্দেশ্য সাময়িক সফল হয়েছে বলা যায়।

তবে ছাড়ের আওতায় উল্লিখিত চারটি দেশ থাকায় এ মন্দাভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের বাজারে প্রতিদিন গড়ে আট লাখ ব্যারেলের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি অব্যাহত রাখতে পারে তেহরান। এর মধ্য দিয়ে বছর শেষে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের জ্বালানি বাণিজ্যে গতি ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *