ভারতের তুলা রফতানি দশকের সর্বনিম্নে
ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্রসহ তুলা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এর জের ধরে চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন কমে নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসতে পারে।
ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে এবারের মৌসুমে তুলা আমদানি বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতীয় আমদানিকারকরা। এ কারণে ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশটিতে তুলা আমদানি আগের মৌসুমের তুলনায় ১২ লাখ বেল (প্রতি বেলে ১৭০ কেজি) বাড়তে পারে। বিপরীতে দেশটি থেকে তুলা রফতানি চলতি দশকের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। খবর বিজনেস লাইন।
বিশ্বের শীর্ষ তুলা উৎপাদক দেশ ভারতে প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে পণ্যটির বিপণন মৌসুম শুরু হয়। চলে পরের বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিএআই) এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৬৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল।
প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন ৩ কোটি ৩৫ লাখ বেলে নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা ২০১০-১১ মৌসুমের পর ভারতে তুলা উৎপাদনের সর্বনিম্ন রেকর্ড।
ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয়। দেশটিতে উৎপাদিত তুলার প্রায় অর্ধেক জোগান দেয় এ দুই রাজ্য। খরার কারণে এ দুই রাজ্যের তুলাচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তারা তুলা সংগ্রহ করেছেন। আগামী দিনগুলোয় বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় পণ্যটির উৎপাদন আরো ব্যাহত হতে পারে।
উৎপাদন কমে আসার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ভারতের তুলা আমদানি খাতে। সিএআইয়ের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ১৫ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়েছিল। চলতি মৌসুমে উৎপাদন কমে আসার জের ধরে দেশটিতে পণ্যটির আমদানি বেড়ে ২৭ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ভারতের বাজারে তুলা আমদানি বাড়তে পারে ১২ লাখ বেল।
এদিকে উৎপাদন কমার জের ধরে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা রফতানিও চলতি দশকের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সিএআই। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবারের মৌসুমে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ বেল তুলা রফতানি হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে চীনের বাজারে রফতানির সুযোগ তৈরি হওয়ায় এবারের মৌসুমে এক কোটি বেল তুলা রফতানির সম্ভাবনা দেখেছিলেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। তবে উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ কমে আসার কারণে এ সম্ভাবনা অধরাই থেকে যেতে পারে।
এ বিষয়ে সিএআইয়ের প্রেসিডেন্ট অতুল জ্ঞানেত্র জানান, ২০১৮-১৯ মৌসুম শুরুর পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভারতীয় আমদানিকারকরা ৫ লাখ ৪৮ হাজার বেল তুলা আমদানি করেছেন। আমদানির জন্য পাইপলাইনে রয়েছে আরো ১০ লাখ বেল তুলা। ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মিসর থেকে সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি হয়।
তিনি বলেন, আসছে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি বেশি হলে তুলা উৎপাদন প্রত্যাশার তুলনায় কমে আসতে পারে। এর প্রভাব পড়বে পণ্যটির আমদানিতে। ভারত তুলা আমদানি বাড়িয়ে দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম চাঙ্গা হয়ে ওঠার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।