এলএনজি আমদানিতে চীনের নতুন রেকর্ড

যত দিন যাচ্ছে, চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ততই বাড়ছে। জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে দেশটি। এ কারণে চীনে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে চাঙ্গাভাব বজায় রয়েছে।

বিশেষত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়েছে চীন। এ ধারাবাহিকতায় গত বছর চীন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। শীত মৌসুমে ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি হয়েছিল।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি আগের এ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় চীনে এলএনজি আমদানি আগের মাসের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়ে ৬৫ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি বছর চীনের এলএনজি আমদানি খাত আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর সিনহুয়া, রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় দেশটিতে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৩০ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে চীনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন।

২০১৭ সালেও দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল। এ ধারাবাহিকতায় ২০২০ সাল নাগাদ দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহারে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি বজায় থাকতে পারে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ আরো বেড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চীনা আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে দেশটি জ্বালানি পণ্যটির আমদানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়াকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে।

পুরো বছরের মধ্যে ডিসেম্বরে চীনের এলএনজি আমদানি খাত সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা ছিল। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে এ সময় চীনা আমদানিকারকরা জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় গত ডিসেম্বরে দেশটিতে মোট ৬২ লাখ ৯০ হাজার টন এলএনজি আমদানি হয়েছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

চীনের ইতিহাসে এটাই ছিল এলএনজি আমদানির সর্বোচ্চ মাসভিত্তিক রেকর্ড। এর আগে গত নভেম্বরে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টন এলএনজি আমদানি হয়েছিল।

চাহিদা বৃদ্ধির জের ধরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনে এলএনজি আমদানিতে আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙে গেছে। শিপিং প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ইকনের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে চীনা আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছেন, যা আগের মাসের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।

গত ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের বাজারে অতিরিক্ত ২ লাখ ৬০ হাজার টন এলএনজি আমদানি হয়েছে। ফলে জানুয়ারিতে চীনের ইতিহাসে জ্বালানি পণ্যটির সর্বোচ্চ আমদানির নতুন রেকর্ড হয়েছে।

শীত মৌসুমে রাজধানী বেইজিংসহ চীনের কয়েকটি বড় শহর মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের শিকার হয়। জারি করতে হয় রেড অ্যালার্ট। এ পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে এসব শহরে ঘর গরম করাসহ নানা কাজে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ কিংবা সীমিত করা হয়। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে চীনা জনগণকে সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ দেয়া হয়।

এ কারণে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। যেহেতু চীন জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে, সে কারণে চীনা বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানিও বাড়ানো হয়।

দাম তুলনামূলক কম থাকা ও পরিবহন ব্যয় কম লাগায় চীন পাইপলাইনে গ্যাসীয় অবস্থার বদলে সমুদ্রপথে কার্গোযোগে এলএনজি আমদানিকে বেশি লাভজনক বিবেচনা করছে। এর জের ধরে দেশটির এলএনজি আমদানি খাত ক্রমেই চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *