দাম ধরে রাখতে উত্তোলন কমালো ওপেক
আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য আনার জন্য সময়ে সময়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে থাকে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)।
এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সংস্থাটি। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এসে বাড়তি সরবরাহের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নতুন করে কমতে শুরু করে। দরপতনের লাগাম টানতে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দেয় ওপেক।
এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ কমে এসেছে। এ সময় জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত দৈনিক উত্তোলন ৩ কোটি ১০ লাখ ব্যারেলের নিচে নেমেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওপেকভুক্ত ১৪ দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় দৈনিক ৮ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল কম। ২০১৭ সালের জানুয়ারির পর এটিই ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় জ্বালানি তেল উত্তোলনের সর্বনিম্ন মাসভিত্তিক পরিমাণ।
একই সঙ্গে দুই বছরের মধ্যে এটিই ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমার সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূলত গত জানুয়ারিতে ইরান, লিবিয়া ও ভেনিজুয়েলার কূপগুলো থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমিয়েছে সৌদি আরবও। এর জের ধরে ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন রেকর্ড পরিমাণ কমেছে।
ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির কূপগুলো থেকে ডিসেম্বরের তুলনায় প্রতিদিন ৩ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল কম জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দৈনিক ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছিল।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর বাজারে সম্ভাব্য সরবরাহ সংকট এড়াতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়িয়ে দিয়েছিল সৌদি আরব। পরবর্তী সময়ে দরপতন ঘটলে জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোর প্রস্তাব সামনে আনে দেশটি।
নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে মন্দাভাব বজায় রয়েছে। ভেনিজুয়েলার ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ায় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন আরো কমে আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের লাগাম টানতে গত ডিসেম্বরে ওপেকভুক্ত দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন নতুন করে কমানোর বিষয়ে একমত হয়। রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত কয়েকটি দেশ এ প্রস্তাবে সায় দেয়।
বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এসব দেশে জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন ডিসেম্বরের তুলনায় দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল কমানো হবে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জানুয়ারিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে এনেছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন গড়ে ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় দৈনিক ১ লাখ ৮৩ হাজার ব্যারেল কম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশটি থেকে দৈনিক গড়ে ৪৪ লাখ ৯৬ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছিল।
ওপেকভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ার কূপগুলো থেকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমেছে। এ সময় দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় উত্তোলন ২০১৮ সালের অক্টোবরের তুলনায় দৈনিক ৩৫ হাজার ব্যারেল কমে এসেছে। রুশ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে রাশিয়ার কূপগুলো থেকে দৈনিক গড়ে ১ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশটির কূপগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছিল। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমেছে দৈনিক ৭০ হাজার ব্যারেল।