দাম বাড়তে শুরু করেছে স্বর্ণের
চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যবহারিক ধাতুর বাজারে অনেকটাই ম্রিয়মাণ ছিল স্বর্ণ। দামের বিবেচনায় প্যালাডিয়ামের কাছে ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছিল ধাতুটি। তবে মাসের শেষ ভাগে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্বর্ণের বাজার। দাম বাড়তে শুরু করেছে মূল্যবান ধাতুটির।
এ ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণের স্পটমূল্য আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি সাত মাসের সর্বোচ্চের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মূলত মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের প্রাক্কালে সম্ভাব্য সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা স্বর্ণের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। খবর সিএনবিসি, রয়টার্স ও কিটকো নিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে গতকাল দিনের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১ হাজার ৩০২ ডলার ৫৮ সেন্টে বেচাকেনা হয়, যা আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির স্পটমূল্য বৃদ্ধির এ হার সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের ১৪ জুনের পর শুধু ১১ অক্টোবর স্পটমার্কেটে স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় এতটা বেড়েছিল। এদিকে গতকাল ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০১ ডলার ৯০ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থান ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি তুলনামূলক শ্লথ হয়ে আসায় স্বর্ণের বাজারে আগে থেকে মন্দাভাব বজায় ছিল। বিনিয়োগকারীরা বাড়তি মুনাফার আশায় স্বর্ণের বিপরীতে মুদ্রাবাজারে বেশি বিনিয়োগ করছিলেন। এ কারণে বেচাকেনা কম থাকায় মূল্যবান ধাতুটির দামও তুলনামূলক কম ছিল।
এমনকি গত বছরের শেষ নাগাদ ভারতের উৎসব মৌসুমের চাহিদাও স্বর্ণের বাজারে কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরাতে পারেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ। এ বিরোধের দামামা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করে। ফলে স্বর্ণের বাজারে বিদ্যমান মন্দাভাব আরো জোরালো হয়। কমে যায় মূল্যবান ধাতুটির দাম।
চলতি বছরের শুরু থেকে স্বর্ণের বাজারে তুলনামূলক মন্দাভাব বজায় ছিল। বিপরীতে প্যালাডিয়ামের দাম ছিল বাড়তি। এক পর্যায়ে মূল্যবান ধাতুর বাজারে স্বর্ণকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে দামি ধাতুর স্বীকৃতি পায় প্যালাডিয়াম। এমন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের স্পটমূল্য আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
২৯ ও ৩০ জানুয়ারি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের দুই দিনব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ফেডপ্রধান জেরোমি পাওয়েল সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবেন বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। এর জের ধরে বৈঠকের প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে ওনিডার বাজার বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেন, ২০১৮ সালে চার দফা সুদের হার পরিবর্তন করেছে ফেডারেল রিজার্ভ। এর প্রভাব পড়েছে স্বর্ণসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের বাজারে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিই তুলনামূলক মন্থর হয়ে এসেছে। তৈরি হয়েছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনগুলোয় এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারলে স্বর্ণের বাজারেও গতি ফেরানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।
নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএনটিএল এফসিস্টোনের বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মেয়ার বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি ভীষণ অস্থির একটি সময় পার করছে। এশিয়া ও ইউরোপের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলছে ইতিহাসের দীর্ঘতম শাটডাউন। এমন পরিস্থিতিতে ফেডের আসন্ন বৈঠক সবার মনোযোগ কেড়েছে। বৈঠকে সুদের হার নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত এলে তা স্বর্ণের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স রুপা ১৫ ডলার ৭৬ সেন্টে বেচাকেনা হয়। এদিন স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স প্লাটিনাম বিক্রি হয় ৮১৬ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে এদিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স প্যালাডিয়ামের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬১ ডলার ৫০ সেন্টে। এর আগে ১৭ জানুয়ারি স্পটমার্কেটে প্রতি আউন্স প্যালাডিয়ামের দাম ১ হাজার ৪৩৪ ডলার ৫০ সেন্টে উঠেছিল। মূল্যবান ধাতুর বাজারে এটাই ছিল প্যালাডিয়ামের সর্বোচ্চ দাম।