সিলেট সীমান্তে কয়লা আমদানি বন্ধ

সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে দেশের বাজারে কয়লা আমদানিতে অচলাবস্থা যেন কাটছে না। দেশে আমদানি করা কয়লার চাহিদা থাকলেও বাদ সাধছেন ভারতীয় আদালত। দেশটির আদালতের নির্দেশে সিলেটের চারটি সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।

অচলাবস্থা কাটিয়ে গত ডিসেম্বরে নতুন করে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই সিলেটের চারটি সীমান্তপথে ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এবারো কারণ হিসেবে সামনে এসেছে ভারতীয় আদালতের নির্দেশনা।

নির্ধারিত সময়ের আগে কয়লার আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। বেকার হয়ে পড়েছেন সীমান্তে কয়লা বোঝাইয়ের কাজে নিয়োজিত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক।

তবে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো মেঘালয় থেকে কয়লা আমদানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ওই সময় পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কয়লা রফতানি স্থগিত চেয়ে মামলা করে মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। একই বছর অভিযোগ আমলে নিয়ে জ্বালানি পণ্যটির রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। বন্ধ হয়ে যায় সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি।

নিজস্ব খনি থেকে উত্তোলনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আমদানি করা কয়লা দিয়ে পূরণ করা হয়। আমদানি করা এসব কয়লার ৭০ শতাংশ জোগান দেয় ভারত।

দেশটির মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশে আমদানি করা হয়। সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের তামাবিল, বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী— এ চার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা আমদানি হয়ে থাকে।

তবে ভারতীয় রফতানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কয়লা রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন দেশটির আদালত। ফলে গত চার বছরে কয়েকবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভারত থেকে কয়লা আমদানির সুযোগ পেয়েছিলেন দেশীয় আমদানিকারকরা।

এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ জুন থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তবে গত ৪ ডিসেম্বর ভারতের আদালত মেঘালয়ের বিভিন্ন খনিতে উত্তোলন ও মজুদ করা কয়লা রফতানির সুযোগ দেয়।

সময় বেঁধে দেয়া হয় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশীয় আমদানিকারকরা গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় কয়লা আমদানি শুরু করেন। ভারত থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার এলসি খোলা হয়। তবে ১৫ জানুয়ারি মেঘালয় থেকে সিলেটের সীমান্তপথে কয়লা আমদানি ফের বন্ধ হয়ে যায়।

ভারতীয় উচ্চ আদালতের নতুন এক আদেশে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। আটকে গেছে অগ্রিম পরিশোধ করা টাকা। নতুন করে কাজ হারিয়েছেন সিলেটের চার সীমান্তে কয়লা পরিবহন ও লোড-আনলোডে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। তবে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় আমদানিকারকরা জানান, ভারত থেকে কয়লা আমদানি নতুন করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। সিলেটের একটি স্থলবন্দর ও তিনটি শুল্কস্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা আমদানি হতো। প্রতি টন কয়লা আমদানিতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় হতো প্রায় ১ হাজার ৬০০ টাকা। সেই হিসাবে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিলেট কয়লা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি চন্দন সাহা বলেন, পূর্বনির্ধারিত ৩১ জানুয়ারির আগেই ভারত থেকে কয়লা আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছোট-বড় মিলিয়ে আট শতাধিক আমদানিকারকের ১০০ কোটি টাকার এলএসি আটকে গেছে। এ টাকা কবে নাগাদ উঠে আসবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন দেশীয় আমদানিকারকরা।

আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের আদালতে এ নিষেধাজ্ঞার ওপর পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানি শেষে কয়লা আমদানির অনুমতি পাওয়া গেলে দেশীয় আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *