চীনাবাদামের দাম বেড়েছে মণে ৯২০ টাকা
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চীনাবাদামের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এখানে খোসাযুক্ত চীনাবাদামের দাম মণে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সর্বোচ্চ ৯২০ টাকা বেড়েছে।
খোসাবিহীন অবস্থায় পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে সর্বোচ্চ ৮৩০ টাকা। চীনাবাদামের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, শীত মৌসুমে চাহিদা বাড়লেও দেশের চরাঞ্চলে উৎপাদন পর্যাপ্ত না হওয়ায় পাইকারি বাজারে চীনাবাদামের সরবরাহ কমে গেছে। এর জের ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে দেশে উৎপাদিত প্রতি মণ চীনাবাদাম (খোসা ছাড়া) মানভেদে ৪ হাজার ৪৫০ থেকে ৪ হাজার ৪৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। দুই সপ্তাহ আগেও এসব চীনাবাদাম মণপ্রতি ৩ হাজার ৬২০ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে খোসাছাড়া চীনাবাদামের দাম বেড়েছে মণে সর্বোচ্চ ৮৩০ টাকা।
অন্যদিকে এখানকার পাইকারি বাজারে গতকাল দেশে উৎপাদিত চীনাবাদাম খোসাযুক্ত অবস্থায় প্রতি মণ ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৯২০ টাকায় বিক্রি হয়। দুই সপ্তাহ আগেও পণ্যটি ২ হাজার ৯৮৫ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে খোসাযুক্ত চীনাবাদামের দাম মণে সর্বোচ্চ ৯২০ টাকা বেড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারের শীত মৌসুমে দেশে চীনাবাদামের চাহিদা বেড়েছে। তবে উৎপাদনকারী এলাকাগুলো থেকে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ সেই তুলনায় বাড়েনি। এ কারণে সরবরাহ সংকট থেকে পাইকারি পর্যায়ে চীনাবাদামের দাম মণপ্রতি ৯০০ টাকার বেশি বেড়েছে।
এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স সাব্বির ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সাব্বির হোসেন বলেন, কোরবানি ঈদের পর থেকে বাজারে চীনাবাদামের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। সরবরাহ বর্তমানের তুলনায় না বাড়লে আগামী দিনগুলোতেও চীনাবাদামের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকতে পারে।
চীনাবাদামের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে খাতুনগঞ্জের পাইকারি মসলাপণ্য ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মঞ্জুর বলেন, দেশে চট্টগ্রাম, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও পঞ্চগড়সহ কয়েকটি এলাকায় চীনাবাদাম উৎপাদন বেশি হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে চীনাবাদাম আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়।
এবারের মৌসুমে এসব এলাকায় পণ্যটির উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বাজারে চীনাবাদামের সরবরাহও কমে গেছে। দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের চীনাবাদাম বাজারে না আসা পর্যন্ত আগামী দু-তিন মাস বাজারে পণ্যটির সরবরাহ সংকট বজায় থাকতে পারে। এ সময় চীনাবাদামের দামও বাড়তির দিকে থাকতে পারে।
এদিকে বাজারে দেশে উৎপাদিত চীনাবাদামের সরবরাহ ঘাটতি ও এর জের ধরে মূল্য বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সংকটের সমাধানে চীনাবাদাম আমদানিতে ঝুঁকছেন দেশীয় আমদানিকারকরা।
গত এক মাসে চীন থেকে দেশের বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাদাম আমদানি হয়েছে। আমদানি করা এসব বাদাম কেজিপ্রতি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকায় দেশে উৎপাদিত চীনাবাদামের সরবরাহ সংকট আমদানি করেও পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের হক ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আজিজুল হক বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে বাড়তি দাম পাওয়ায় দেশীয় আমদানিকারকরা চীনাবাদামের আমদানি ক্রমেই বাড়াতে শুরু করেছেন। আগামীতে বাড়তি আমদানির কারণে চীনাবাদামের বাজারে বিদ্যমান চাঙ্গাভাব কিছুটা হলেও কমতে পারে বলে মনে করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আর সরবরাহ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বাজারে আরো কিছু দিন বাড়তি দামে বিক্রি হতে পারে চীনাবাদাম।