আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমছে

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রয়োজনীয় চালের সিংহভাগ উৎপাদন করে এশিয়ার দেশগুলো। খাদ্যপণ্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্যের অন্যতম ক্রেতা ও বিক্রেতা এসব দেশ। এ কারণে চালের দাম নির্ধারণে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো এশীয় দেশগুলোর বাজার পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক হিসেবে ভূমিকা রাখে। চলতি বছরের শুরু থেকে শীর্ষ চাল রফতানিকারক এসব দেশে খাদ্যপণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে।

একদিকে অনুকূল আবহাওয়ার জের ধরে বাড়তি উৎপাদন, অন্যদিকে রফতানি চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এশিয়ার দেশগুলোয় চালের দাম কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর বিজনেস রেকর্ডার ও এগ্রিমানি।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৩৭৯-৩৮৪ ডলারে। আগের সপ্তাহেও ভারতে প্রতি টন চালের রফতানি মূল্য ছিল ৩৮২-৩৮৭ ডলার। সেই হিসাবে, এক সপ্তাহেই ভারতের বাজারে প্রতি টন চালের রফতানি মূল্য কমেছে টনপ্রতি ৩ ডলার।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ২২ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি খাদ্যপণ্যটির রফতানি সাকল্যে ৩ লাখ টন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।

২০১৮ সাল শেষে দেশটি থেকে মোট ১ কোটি ২৫ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ আমদানি কমিয়ে দেয়ায় বিদায়ী বছরে ভারত থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি প্রবৃদ্ধির গতি তুলনামূলক শ্লথ ছিল।

একই চিত্র দেখা গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডেও। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্য টনপ্রতি ৫ ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮৫-৪০০ ডলারে। আগের সপ্তাহে দেশটির বাজারে খাদ্যপণ্যটির সর্বনিম্ন রফতানি মূল্য ছিল ৩৯০ ডলার।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের চাল রফতানিকারকদের বরাতে বিজনেস রেকর্ডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে চালের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে রফতানি চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এবারের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশে ধান-চালের বাম্পার ফলন হয়েছে।

এ কারণে বাংলাদেশের বাজারে খাদ্যপণ্যটির আমদানিও আগের তুলনায় কমতির দিকে রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে। কেননা ভারতীয় চালের বড় ক্রেতা বাংলাদেশ। রফতানি চাহিদা কমে যাওয়ায় চাল রফতানি নিয়ে ভারতীয় রফতানিকারকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন বাজার খুঁজতে শুরু করেছেন তারা। এ পরিস্থিতি ভারতের বাজারে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম কমিয়ে দিয়েছে।

ব্যাংককভিত্তিক ট্রেডাররা জানান, বাড়তি উৎপাদনের বিপরীতে চালের রফতানি চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। মোকামগুলোয় খাদ্যপণ্যটির বাড়তি মজুদ গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে মুদ্রাবাজারে থাই বাথের অবস্থান রয়েছে বেশ দুর্বল। এসব কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে থাইল্যান্ডের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

রফতানিযোগ্য চালের দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে ভিয়েতনামে। চাল রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩৫৫-৩৬০ ডলারে।

আগের সপ্তাহেও খাদ্যপণ্যটির টনপ্রতি রফতানি মূল্য ছিল ৩৭০-৩৭৫ ডলারে। সেই হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভিয়েতনামের বাজারে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্য টনপ্রতি ১৫ ডলার কমেছে।

দেশটির ব্যবসায়ীরা জানান, ভিয়েতনাম থেকে চাল রফতানির গতি অনেকটাই কমে গেছে। এর জের ধরে দেশটিতে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনে ১৫ ডলার কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামিজ রফতানিকারকরা ইন্দোনেশিয়ার বাজারে চাল রফতানি বাড়াতে আলোচনা শুরু করেছেন।

ইতিবাচক ফলাফল এলে ভিয়েতনামে চালের দাম বর্তমানের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পারে। তবে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ভিয়েতনামের বাজারে নতুন মৌসুমের চাল আসতে শুরু করবে। এ সময়ের মধ্যে চাল রফতানিতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরাতে না পারলে ভিয়েতনামের বাজারে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্যে বিদ্যমান মন্দাভাব আরো জোরদার হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *