বাড়তি সরবরাহে দাম কমছে পেঁয়াজের

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বাড়তি সরবরাহের জের ধরে এখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মানভেদে ১০-১৭ টাকায় নেমে এসেছে। মূলত দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। একই সময় ভারতের বাজারে দাম কম থাকায় পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশীয় আমদানিকারকরা।

সব মিলিয়ে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে খাতুনগঞ্জ বাজারে। এ পরিস্থিতি পেঁয়াজের দাম কমার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান স্থানীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে কেজিপ্রতি ১০-১৭ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এর মধ্যে ভারতের নাসিক থেকে আমদানি করা নতুন মৌসুমের ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৭ টাকায়। কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে অনেক ব্যবসায়ী গত মৌসুমে নাসিক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

এক বছর ধরে মজুদ করে রাখা এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ডিসেম্বরের শেষদিকে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে ২৮-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, বিগত এক বছরে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতার ভেতর দিয়ে পার করেছে। কখনো পণ্যটির দাম আকাশ ছুঁয়েছে, কখনো দরপতনের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। বিদায়ী বছরের শুরুতে পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে শুরু করে।

বছরের প্রথম ছয় মাস (জানুয়ারি-জুন) খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০-৪০ টাকায় ওঠানামা করেছিল। তবে গত আগস্টে ঈদ সামনে রেখে বাড়তি চাহিদার জের ধরে পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বছরের একেবারে শেষ সময় এসে দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমে যায়; যা এখনো অব্যাহত।

স্থানীয় মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডাসের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হোসেন  বলেন, দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসায় আমদানি করা পেঁয়াজের বেচাকেনা কমে গেছে। এর জের ধরে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করে।

ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের দাম কম। ফলে অল্প খরচে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। এ কারণে দেশের হিলি, বেনাপোল, ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্যটির আমদানি আগের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে পাকিস্তান, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। এর ফলে মৌসুমের শুরুতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। এ পরিস্থিতি পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দিয়েছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেট কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ বলেন, এখন দেশে পেঁয়াজের নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতি বছর এ সময়টায় পণ্যটির দাম কমতির দিকে থাকে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি আমদানি। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সরবরাহের জের ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০-১৭ টাকায় নেমে এসেছে।

অন্যদিকে বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপকালে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে বাড়তি সরবরাহের জের ধরে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। ফলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হন। দাম না পেয়ে তারা পণ্যটির উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ আমদানিতে সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন। এতে একদিকে দেশীয় উৎপাদনকারীদের ক্ষতির ঝুঁকি কমে আসবে, অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারে ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার লাগাম টানা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *