অর্থমন্ত্রীর শ‌র্তে ব্যাং‌ক মা‌লিক‌দের তৎপরতা শুরু

‘খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়তে দেয়া যা‌বে না’ অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মুস্তফা কামালের এমন শ‌র্ত বাস্তবায়‌নে তৎপরতা শুরু ক‌রে‌ছেন ব্যাং‌কের মা‌লিক‌রা। ‌

এ‌রই অংশ হি‌সে‌বে শ‌নিবার (১২ জানুয়া‌রি)‌ যৌথ সভা ক‌রে‌ বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।

খেলা‌পি ঋণ কমা‌নো, তারল্য সংকট, ব্যাংক খা‌তের সংস্কার এবং বর্তমান সমস্যা নি‌র্ণয় ও উ‌ত্তর‌ণের উপায় খুঁজ‌তে এ যৌথ সভা হয়।

সভা স‌ম্পর্কে জান‌তে চাই‌লে বিএবি’র সভাপ‌তি ও এ‌ক্সিম ব্যাং‌কের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা দেখা করেতে গিয়ে‌ছিলাম। তখন তি‌নি ব্যাংক খাত সংস্কারসহ বেশকিছু শর্ত ও পরামর্শ দেন। তার নি‌র্দেশনার আ‌লো‌কে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য আজকে এবিবি ও বিএবি’র যৌথ সভা হ‌য়ে‌ছে।

বর্তমানে ব্যাংক খা‌তের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এ‌টি কমা‌তে বি‌ভিন্ন উপায় খোঁজা হ‌চ্ছে উ‌ল্লেখ করে বিএবি’র সভাপ‌তি ব‌লেন, খেলাপি ঋণকে কয়েকটি স্তরে বিন্যাস করতে চাচ্ছি। এর মধ্যে ইচ্ছেকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করা। এটি কোন প্র‌ক্রিয়ায় আলাদাভাবে নির্ণয় করা যার; সেই কৌশল সম্প‌র্কে আলোচনা হয়ে‌ছে।

এ ছাড়া বৈঠ‌কে ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যেসব সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করা ও সমাধানের পথ নি‌র্ণয়ের আ‌লোচনা হ‌য়ে‌ছে। এসব বিষ‌য়ে আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে আরেকটি ফলোআপ মিটিং হবে। এরপর সমস্যা ও সমাধা‌নের বি‌ভিন্ন বিষয় নি‌য়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ব‌লে জানান ব্যাংক প‌রিচালক‌দের এ নেতা।

নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, সরকার চা‌চ্ছে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার হোক। কারণ, এই খাত যত ভালো থাকবে অর্থনীতি তত উন্নত হবে।

এর আ‌গে গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি ব্যাংক মালিক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছি‌লেন, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আজ থেকে ‘আর এক টাকাও’ বাড়বে না।

ওইদিন অর্থমন্ত্রী ব‌লেন, ‘বৈঠকে বসার আগেই আমার শর্ত ছিল একটা। কোনো কিছু আলাপ করার আগে আমার এক দফা। আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়তে পারবে না। আপনারা কীভাবে বন্ধ করবেন, কীভাবে টেককেয়ার করবেন, কীভাবে ম্যানেজ করবেন; আপনাদের ব্যাপার।

‘তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন; তাই বলছি, আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ বাড়বে না, ইনশাআল্লাহ।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এর আ‌গে গত বছরের মাঝামাঝিতে ব্যাংকের আমানতের সর্বোচ্চ সদুহার ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এমন প্রতিশ্রুতি দেন তারা। জুলাই থেকে বাস্তবায়নের কথা বলে ব্যাংকগুলো সরকারের কাছ থেকে কর্পোরেট করহার কমানোরসহ নানা সুযোগ সুবিধা নি‌য়ে‌ছে। কিন্তু নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন ক‌রে‌নি। এখনও ১০ শতাংশের উপরে ঋণের সুদ আদায় করছে বেশিরভাগ ব্যাংক।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাতের করহার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ করা হয়। ঋণের সুদহার কমানোর শর্তেই ব্যাংক করহার কমানোর কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবার লাগামহীন খেলা‌পি কমা‌তে তৎপরতা শুরু ক‌রে‌ছে এ‌বি‌বি ও বিএ‌বি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *