অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালুর প্রস্তাব দেবে ঢাকা চেম্বার
করপোরেট কর রিটার্ন প্রদানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি না থাকায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানুয়ালি রিটার্ন জমা দেয়। ম্যানুয়াল বা হাতে লেখা রিটার্ন সময়সাপেক্ষ, জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ হয়। এসব উল্লেখ করে দ্রুত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালুর প্রস্তাব করবে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
সংগঠনটি আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য আগাম কর ধাপে ধাপে বিলুপ্তি ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আগাম কর হ্রাস করার প্রস্তাব দেবে। ঢাকা চেম্বার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৪২টি প্রস্তাব পেশ করবে।
সংগঠনটি বলছে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে করজাল সম্প্রসারণ, মূসক ব্যবস্থার সংস্কার, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা ও ব্যক্তি শ্রেণির কর কাঠামো সহজ হবে। ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করা ও সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করবে। বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ ও সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ রয়েছে
আজ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে প্রাক বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরবে সংগঠনটি। ডিসিসিআই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালু করার প্রস্তাবের পক্ষে সংগঠনটি বলছে, হাতে লেখা রিটার্নে দেরি হয়, অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে থাকে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়। অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন পদ্ধতি যদি অন্যান্য সব সেবার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তাতে বাড়তি কাগজ দিতে হবে না। এই সিস্টেমে আপিল ও ফেরতপ্রদান প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় পরিচালিত হবে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
সংগঠনটি বলছে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। এই দুই অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায়ে চাপও বেশি। যা সামগ্রিক করজালের ভারসাম্যহীনতা নির্দেশ করে। রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে এনবিআরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ডিসিসিআই। পাশাপাশি তারা ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) সংগ্রহে বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেবে।
সেবা সংক্রান্ত উৎসে কর কর্তন হার বেশি হওয়ায় এবং তা মিনিমাম কর হিসেবে গণ্য হওয়ায় ব্যবসায়িক খরচ বাড়ছে। এ অবস্থায় বাজেট প্রস্তাবে উৎসে করের কর্তন হার যৌক্তিক করার প্রস্তাব দেবে ডিসিসিআই।
মূসক প্রস্তাবে সংগঠনটি একক মূসকহার বা ভ্যাট হার ১০ শতাংশ, অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট এক শতাংশ করার প্রস্তাব দেবে।
ভ্যাট সংগ্রহ ব্যবস্থাকে আরও বেশি স্বচ্ছ, দক্ষ, ডিজিটাল করতে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি ও তা ব্যবসায়ীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করবে সংগঠনটি। এর ফলে ভ্যাট ফাঁকি রোধ, ভ্যাট আদায় ও নিরীক্ষা সহজ হবে বলে মনে করে ডিসিসিআই। এছাড়া ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণের স্বচ্ছতা ও সহজ করা, রপ্তানিমুখী বন্ডেড ট্যানারি শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নীতিগত সংস্কার করার প্রস্তাব করছে তারা।
সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে রপ্তানিমুখী বন্ডেড ট্যানারি শিল্পের জন্য ফ্রি অব কস্ট (এফওসি)- এর ভিত্তিতে ওয়েটব্লু, ক্রাস্ট চামড়া ও কেমিক্যাল আমদানির অনুমতি নেই। এছাড়া, বস্ত্র ও পোশাক শিল্প, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প, অটোমোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প, আসবাবপত্র ও কাঠ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ ও প্রকৌশল শিল্প, প্লাস্টিক ও প্যাকেজিং শিল্প এফওসির ভিত্তিতে কাঁচামাল আমদানির অনুমতি না থাকায় এসব শিল্প দ্রুত বায়ারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত করতে পারছে না। যা রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী এফওসির ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি উৎপাদিত প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরাসরি বায়ারের মনোনীত সরবরাহকারীর মাধ্যমে ইপিজেড ও নন-ইপিজেড বন্ডেড কারখানায় সরবরাহের সুযোগ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংশোধন করার প্রস্তাব করবে সংগঠনটি।