ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি!

স্টাফ রিপোর্টার

২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ঘোষণা করেছে ফিফা। ৩২ দলের এ টুর্নামেন্টের জন্য ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেরও দ্বিগুণের বেশি প্রাইজমানি থাকছে! যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১৪ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ১২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা)।

ক্রীড়া ইভেন্টের সঙ্গে তুলনা করলে এ প্রাইজমানি অবিশ্বাস্য। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে প্রাইজমানি ছিল ৪৪ কোটি ডলার আর ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপে প্রাইজমানি ছিল ১১ কোটি ডলার। ক্রিকেট ইভেন্টে প্রাইজমানি অবশ্য ফুটবলের তুলনায় অনেক কম। যেমন চলমান আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রাইজমানি মাত্র ৬৯ লাখ ডলার (প্রায় ৮৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা)। এ আসরে ষষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশ ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মতো পেয়েছে। অথচ ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া ক্লাবগুলোর বেশির ভাগই শতকোটি টাকারও বেশি আয় করবে!

ফিফা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ টুর্নামেন্ট থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় হবে, তার সবটাই ভাগ করে দেয়া হবে ক্লাবগুলোর মধ্যে। ফিফা একটি ডলারও নিজেদের জন্য রাখবে না। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া সব ক্লাবের জন্যই প্রাইজমানি থাকবে। এছাড়া ফলের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হবে পারফরম্যান্স বোনাস। ক্লাবগুলো গ্রুপ পর্বে খেলার জন্যই অংশগ্রহণ ফি পাবে, সেই সঙ্গে পরবর্তী রাউন্ডে উত্তরণ সাপেক্ষে পাবে পারফরম্যান্স বোনাস। এছাড়া ইউরোপের যেসব ক্লাব অংশ নেবে না তাদের জন্য ‘সলিডারিটি পেমেন্ট’ হিসেবে ২০ কোটি ডলার রেখেছে ফিফা।

প্রাইজমানি ও রাজস্ব বণ্টন নিয়ে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো বলেছেন, ‘ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ক্লাব ফুটবলেরই শুধু সর্বোচ্চ আসর নয়, ক্লাবগুলোকে সুবিধা দেয়ার দিক থেকেও সর্বোচ্চ অঙ্গীকারের জায়গায় পৌঁছে যাবে, যা আগে কখনো কোনো প্রতিযোগিতায় দেখা যায়নি। টুর্নামেন্ট থেকে ফিফার আয় করা সব অর্থই অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে, ফিফা এক পয়সাও নিজের হাতে রাখবে না। আবার বৈশ্বিক ফুটবল উন্নয়নের জন্য ফিফার যে সঞ্চিত অর্থ আছে, তাতেও হাত দেয়া হবে না।’

২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিটি মহাদেশের চ্যাম্পিয়ন ও আয়োজক দেশের একটি দল নিয়ে। এবারই প্রথম ছয় মহাদেশ থেকে খেলবে ৩২ দল। ১৪ জুন উদ্বোধনী ম্যাচে মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির দল ইন্টার মায়ামি মুখোমুখি হবে মিসরের আল আহলির। ১৩ জুলাই নিউ জার্সিতে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল।

ক্লাব বিশ্বকাপে ফিফার আয়ের বড় অংশ আসছে টিভি সম্প্রচার চুক্তি থেকে। গত ডিসেম্বরে ক্রীড়ার স্ট্রিমিং সেবাদানকারী ডিএজেডএনের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয় ফিফার।

অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর মধ্যে আবার ইউরোপের ক্লাবগুলো বেশি অর্থ পাবে। কারণ মানের বিচারে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে এবং ক্লাব বিশ্বকাপ চলার সময় তাদের প্রাক-মৌসুম সফর বিঘ্নিত হবে। ফলে ফিফা ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের বাড়তি অর্থ দেবে।

ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন (ইসিএ) থেকে ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নেবে চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, প্যারিস সেন্ট জার্মেই, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, বেনফিকা, পোর্তো ও এফসি সলজবুর্গ। ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রতি সমর্থন দেয়া রিয়াল মাদ্রিদ ইসিএর অংশ নয়, যারা ক্লাব বিশ্বকাপে খেলবে। ইসিও অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রেখেছে।

ইউরোপের বাইরের ক্লাবগুলোও বর্ধিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। যদিও তারা কত অর্থ পাবে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার না। ডিসেম্বরে ইনফ্যান্তিনো বলেছেন, ‘ফিফা যা-ই করবে, সেটা বৈশ্বিক হবে। ফিফা বিশ্বব্যাপী সম্পৃক্ত হতে হবে। বিশ্বের সবাইকে সুযোগ দিতে হবে ফিফাকে এবং ক্লাব বিশ্বকাপ সেটাই করছে।’

কনফেডারেশন অব আফ্রিকান ফুটবল (সিএএফ) ক্লাব বিশ্বকাপে আফ্রিকার ক্লাবগুলোর স্বার্থের বিষয়টি দেখছে। সিএএফ সদস্য ও আফ্রিকান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের (এসিএ) চেয়ারম্যান হারসি এ সাইদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আফ্রিকা থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে চারটি ক্লাব—আল আহলি, উইদাদ এসি, ইএস তিউনিস ও মামেলোদি সানডাউনস। এ চারটি দিয়ে শুরু করতে পেরে আমরা খুশি, আশা করি পরের আসরগুলোয় আমাদের আরো বেশি প্রতিনিধি থাকবে। তবে সত্য বলতে কি, টিভিস্বত্ব আর সলিডারিটি পেমেন্ট নিয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয় নিয়ে একই প্লাটফর্মে আলোচনা হোক, সেটা আমরা চাই। এ আলোচনায় এসিএকে অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা খুশি হব।’

রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে বিস্তারিত না জানলেও উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার বেশকিছু ক্লাবের কর্মকর্তারা বিবিসিকে ফিফার এ আয়োজন নিয়ে নিজেদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।

এশিয়া থেকে আল হিলাল, উরায়া রেড ডায়মন্ড, আল আইন, উলসান এইচডি; উত্তর ও মধ্য আমেরিকা থেকে মন্তেরেই, সিয়াটল সাউন্ডার্স, লিওন, পাচুয়া; দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পালমেইরাস, ফ্লামেঙ্গো, ফ্লুমিনেন্স, বোটাফোগো, রিভার প্লেট ও বোকা জুনিয়র্স; ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে অকল্যান্ড সিটি অংশ নিচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপে।

টুর্নামেন্টে ইউরোপ থেকে অংশ নেবে মোট ১২টি ক্লাব। বেটিং সাইটগুলোর কাছেও ইউরোপের দলগুলো এগিয়ে। শীর্ষ ১০ ক্লাবের মধ্যে নয়টিই ইউরোপের। ইউরোপ থেকে শেষ ষোলোয় পৌঁছবে না, এমন তালিকায় আছে শুধু রেড বুল সলজবুর্গ। —বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *