যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় কাজ করতে সম্মত যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইউক্রেন
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা তৈরিতে কাজ করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইউক্রেন। যুদ্ধের অবসান বিষয়ে আলোচনা করতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়ার সময় রোববার এ কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার।
শুক্রবার হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেন। শীর্ষ সম্মেলনটি মূলত এ কারণে প্রভাবিত হয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রতি অকৃতজ্ঞ।
কিন্তু স্টারমার বলেছেন, তিনি শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সহায়তা করতে চান। আলোচনার ব্যর্থতাকে উত্তেজনা বাড়ানোর বদলে তিনি এটিকে ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে নতুনভাবে যোগাযোগের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
স্টারমার বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সম্ভবত অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করবে। এরপর তারা এ পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবেন। শুক্রবার থেকে স্টারমার ও মাখোঁ দুজনেই ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন।’
লন্ডনের বৈঠকটি যুদ্ধকবলিত মিত্র দেশকে সহায়তা করা ও ইউরোপের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রোববারের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে একটি ইউরোপীয় সামরিক বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। স্টারমার বলেছেন, এটি ইচ্ছুক দেশগুলোর একটি জোটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
রোববার অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি রক্ষা করতে একটি ইউরোপীয় সামরিক বাহিনী গঠনের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি ইচ্ছুকদের একটি জোট দ্বারা পরিচালিত হবে।
স্টারমার আরো জানান, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিশ্বাস করেন না। তবে ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেন। তার মতে, ট্রাম্প যদি বলেন তিনি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চান, তবে স্টারমার তা বিশ্বাস করবেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য খুব জরুরি।’
স্টারমার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যদি কোনো শান্তি চুক্তি হয়, তবে সেটা রক্ষা করা জরুরি। কারণ সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলে পুতিন আবার হামলা করতে পারেন। অতীতেও এমন হয়েছে। তাই এবার স্থায়ী চুক্তি হওয়া দরকার।’
এ গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠক ল্যানকাস্টার হাউজে অনুষ্ঠিত হবে, যা বাকিংহাম প্রাসাদের কাছে ২০০ বছরের পুরনো একটি রাজকীয় ভবন। এটি মূলত ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বৈঠকে ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, স্পেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, চেক প্রজাতন্ত্র ও রোমানিয়ার নেতারা থাকবেন। এছাড়া তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ন্যাটোপ্রধান, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টও বৈঠকে যোগ দেবেন।
আশা করা যাচ্ছে, এ বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য আর্থিক ও সামরিক সহায়তার পাশাপাশি যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন নিয়েও আলোচনা করা হবে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া এ বৈঠকের মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে, যাতে পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি ও যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করা যায়। মূলত যুদ্ধে শান্তি আনাই এ বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।