কর ব্যবস্থা কার্যকর না হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না

স্টাফ রিপোর্টার

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ট্যাক্সেশন সিস্টেম (কর ব্যবস্থা) যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাবে না। রাজধানীর আলোকি কমিউনিটি সেন্টারে ১৩তম জাকাত ফেয়ারের উদ্বোধনী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) আয়োজিত এ মেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাকাত’।

উদ্বোধনী দিনে ‘রোল অব ইসলামিক সোশ্যাল ফাইন্যান্স ইন ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জাকাত দিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। সমাজে জাকাতের প্রভাব দৃশ্যমান করতে হবে। সম্পদ বণ্টনের যে প্রক্রিয়াগুলো সবচেয়ে বেশি অনুসরণীয়, তার মধ্যে অন্যতম জাকাত।’

সমাজের বৈষম্য দূর করতে জুলাই অভ্যুত্থানে অনেক তাজা প্রাণ দিতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অথচ বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে। এর মূলোৎপাটন করতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টন অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রয়োজন। এর নিয়ামক হিসেবে আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় দায় সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বর্তমানে মানুষের সাফল্যকে বিচার করা হয় তার ভোগ সক্ষমতা দিয়ে। তার আত্মসম্মান, শ্রদ্ধা ও সামাজিক দায়কে বিচার করা হয় না।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক। তিনি ইন্টিগ্রেটেড সার্কুলার ফ্লো মডেল উপস্থাপন করেন। যেখানে বলা হয়, জাকাত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাথমিক ও জরুরি সহায়তা, ওয়াক্ফ দ্বারা অবকাঠামোগত দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন, সাদাকাহ দ্বারা বিভিন্ন কমিউনিটি প্রজেক্টস বাস্তবায়ন, কর্জে হাসানা দ্বারা উদ্যোক্তাদের সুদবিহীন ঋণ এবং তাকাফুলের মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করা হবে।

সেমিনারে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জাকাত আদায়ের হিসাব পাওয়া যায়, কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এটি যথাযথভাবে সংগ্রহ ও বিতরণ হচ্ছে না। বিশ্বের অনেক দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত গ্রহণ ও বিতরণ করা হয়, যা তাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশেও এটি কার্যকর করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব।’

ওয়ার্ল্ড জাকাত অ্যান্ড ওয়াক্ফ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দাতুক ড. মোহাম্মদ গাজালি নুর বলেন, ‘সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাকাত দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে। মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশও যদি সরকারিভাবে জাকাত তদারকি করে, তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।’

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাকাতের কার্যকর প্রয়োগ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘জাকাতের মাধ্যমে নতুন উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করতে হবে এবং সমাজে এর দৃশ্যমান প্রভাব আনতে হবে। এজন্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবারই জাকাত ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখা উচিত।’

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় আরো অংশ নেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, তারবিয়াহ এডুকেশন নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখতার আহমাদ, সিজেডএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিষদের আহ্বায়ক এবং রহিমআফরোজ গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মুনওয়ার মিসবাহ মঈন।

দুই দিনব্যাপী জাকাত মেলার এবারের আয়োজনে মোট সাতটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নারীদের জন্য ‘নারী জীবনে জাকাত, সাদাকাহ ও ওয়াক্ফ অনুশীলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সেমিনার ও প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জাকাত নিরূপণ কর্মশালা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *