৭ বিমা কোম্পানির বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার

বিমা খাতে নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় নিয়ম না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ বিমা কোম্পানি এ নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। এবার ৭টি নন-লাইফ কোম্পানি সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

কোম্পানিগুলো হলো- কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স লিমিটেড ও পিপলস ইনস্যুরেন্স লিমিটেড।

বিমা আইন অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোর মোট সম্পদের ৭.৫০ শতাংশ সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশই এ নিয়ম মানেনি।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০২৩ সালে পরিচালিত তদন্তে উঠে আসে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আইন লঙ্ঘন করলেও কার্যকর নজরদারি এবং শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিয়ম ভঙ্গ অব্যাহত রেখেছে।

বিমা খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পদ সুরক্ষা থাকলেও সরকারি বন্ডে দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় না। তাই বছরের পর বছর কোম্পানিগুলো আইনের লঙ্ঘন করে আসছে। এই উদাসীনতার জন্য যেমন কোম্পানিগুলো দায়ী, তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল ব্যবস্থাপনারও দায় রয়েছে। কোম্পানিগুলোকে বড় ধরনের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে এই অনিয়ম দিন দিন বাড়বে। এটার জন্য দায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আইডিআরএর ২০১৯ সালের ‘নন-লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালা’ অনুযায়ী, প্রতিটি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে তাদের সম্পদের ন্যূনতম ৭.৫০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পর কোম্পানিগুলোর সম্পদের বাকি অংশ ৯টি খাতে নির্ধারিত হারে বিনিয়োগ করা যাবে।

এ জন্য মেঘনা ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স ও অগ্রণী ইনস্যুরেন্সকে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য ৫ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আইডিআরএ। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আইডিআরএর শুনানি শেষে ২০২৪ সালের বিভিন্ন সময় এই জরিমানা করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে কোনো বিনিয়োগ করেনি ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্স; যা সম্পূর্ণভাবে বিধিমালার লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান তারেক বলেন, তদন্তের সময় সরকারি সিকিউরিটিজে কোনো বিনিয়োগ ছিল না। কিন্তু এখন আইন অনুসারে বিনিয়োগ করেছি। প্রবিধানে নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার চেয়ে এখন বেশিই বিনিয়োগ রয়েছে।

পিপলস ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা শতাংশের হিসাবে মোট সম্পদের ৫.৩৩ শতাংশ। কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স বন্ডে বিনিয়োগ করেছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা বিনিয়োগের ২.০২ শতাংশ। ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা কোম্পানিটির বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের ১.৮৪ শতাংশ। এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্সের সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা, যা সম্পদের ০.৫৯ শতাংশ। নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ১৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা শতাংশের হিসাবে ৬.৪৩ শতাংশ।

এ ছাড়াও ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ৬.৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো কোম্পানিই বন্ডে ৭.৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করেনি।

এদিকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী মোকাররম দস্তগীর বলেন, “এখন আইডিআরএর নির্দেশনা অনুসারে বিনিয়োগ বিধির শর্তাদি পূর্ণ করতে সরকারি সিকিউরিটিজে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেছি। তবে ইসলামি বিমা কোম্পানি হিসেবে আমাদের অবশ্যই শরিয়াহ বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে বিনিয়োগ করতে হবে। আর শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগই আমাদের জন্য লাভজনক।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সঠিক আছে কি না জানতে ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলোর অফিস পরিদর্শন করে পরিদর্শক দল। পরিদর্শনে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রকৃত চিত্র দেখা হয়। এতে দেখা গেছে, সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের নিয়ম ভঙ্গসহ নানা অনিয়ম করছে কোম্পানিগুলো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *