কাঁকড়া-শুঁটকি রফতানিতে আয় ৮০০ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি ক্রমেই নিম্নমুখী হলেও কাঁকড়া ও শুঁটকি রফতানি বেড়েছে। গত অর্থবছরে ৯ হাজার ৭৮৯ টন কাঁকড়া ও ৩ হাজার ৩৮ টন শুঁটকি রফতানি করে আয় হয়েছে যথাক্রমে ৭৩৫ ও ৭৬ কোটি টাকা, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্ববাজারে মৎস্য জাতীয় দুই পণ্যের রফতানি বেড়ে যাওয়া এবং দাম ভালো পাওয়ায় এ খাত নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝেও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মানসম্মত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রফতানিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে এ খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ হাজার ৭৮৯ টন কাঁকড়া রফতানি করা হয়। যার বাজারমূল্য ছিল ৭৩৫ কোটি ২১ লাখ ৩ হাজার ৪৪৭ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকায় ৭ হাজার ৪৫২ টন কাঁকড়া রফতানি করা হয়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রফতানি বেড়েছে ২ হাজার ৩৩৭ টন এবং রফতানি মূল্য বেড়েছে ২৯০ কোটি টাকার বেশি।

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৯৪ কোটি টাকায় ৭ হাজার ৭৩০ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬৪ কোটি টাকায় ৬ হাজার ২৮৮ টন কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১২ হাজার ৫৫৮ টন কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল, যার রফতানি মূল্য ছিল মাত্র ১৯৯ কোটি টাকা। বিশ্ববাজারে তখন কাঁকড়ার দাম এখনকার মতো বেশি ছিল না। তাছাড়া ডলারের দামও সেই সময় কম ছিল। মূলত বাংলাদেশ থেকে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কাঁকড়া রফতানি হয়।

অন্যদিকে সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুঁটকি রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৩৮ টন। যার মধ্যে সাধারণ শুঁটকি ২ হাজার ৯৬২ টন এবং লবণাক্ত শুঁটকি সাড়ে ৭৬ টন। এসব শুঁটকির রফতানি মূল্য ছিল ৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ৫০৩ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি হয় ২ হাজার ২২৪ টন, যার বাজারমূল্য ছিল ৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শুঁটকি রফতানি বেড়েছে ৮১৪ টন, আর্থিক মূল্যে যা ২৭ কোটি ৭৮ লাখ ৩১ হাজার টাকারও বেশি।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ৪ হাজার ৬৯১ টন শুঁটকি মাত্র ৬২ কোটি টাকায় রফতানি হয়। অর্থাৎ চার বছর আগে রফতানির পরিমাণ বেশি হলেও দাম ছিল কম। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মূলত চীন, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়।

চট্টগ্রামের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপপরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে শুঁটকির চাহিদা আছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যদি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করতে পারে তাহলে এ বাজার আরো বড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদার বাইরে গিয়ে শুঁটকি রফতানি করলে তারা তা গ্রহণ করে না—উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ম মেনে শুঁটকি রফতানির জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকি। কারণ স্ট্যান্ডার্ন্ড না মেনে রফতানি করা হলে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশেও কাঁকড়া ও শুঁটকির দাম এখন বাড়তির দিকে। ফলে অনেকেই এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।

এমইউ সি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ির চাহিদা বিশ্ববাজারে কমে যাওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে রফতানিও নিম্নমুখী হতে থাকে। এ কারণে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি কাঁকড়া রফতানিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি শুঁটকি রফতানিও ঊর্ধ্বমুখী। তাই আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ করে যদি এ জাতীয় পণ্যের রফতানি বাড়ানো যায় তাহলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।’

রফতানিকারকরা জানান, নোনা পানির কারণে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় কাঁকড়ার উৎপাদন ভালো হয়। বর্তমানে খুলনার পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ছাড়াও বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় বিভিন্ন জাতের কাঁকড়ার চাষাবাদ বাড়ছে। চিংড়ি চাষে নানা ঝুঁকি থাকায় বিকল্প হিসেবে অনেক উদ্যোক্তা ও চাষী কাঁকড়াকে বেছে নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *