শুল্ক আরোপ নিয়ে আবারো ভারতকে সতর্কবার্তা ট্রাম্পের

স্টাফ রিপোর্টার

আবারো ভারতকে আমেরিকান পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । কয়েক মাস আগেও ট্রাম্প ভারতকে শুল্কের ‘বেশ বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্য মার্কিন-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের মধ্যে স্থায়ী উত্তেজনাকেই নির্দেশ করছে। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমস।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জানিয়ে দিয়েছেন যে ভারত যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ অব্যাহত রাখে, তাহলে তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন। তিনি বলেন, তারা যদি কর আরোপ করে, আমরাও একই পরিমাণ কর আরোপ করব। তারা কর আরোপ করুক, আমরাও করব এবং তারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর কর আরোপ করছে। কিন্তু আমরা এখনো কর আরোপ করিনি।

বাণিজ্য চুক্তিতে সাম্য নিশ্চিত করার বৃহত্তর কৌশলে হিসেবে এ ধরনের কঠোর অবস্থান ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট শাসনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে বলে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। মার্কিন পণ্যে উঁচু হারে শুল্ক আরোপ করার কারণে এর আগেও ভারতের সমালোচনা হয়েছে। সর্বশেষ দেয়া মন্তব্যে ট্রাম্প বিশেষ করে ভারত ও ব্রাজিলের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, পারস্পরিক শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে কি আমরা কিছুই আরোপ করব না?’

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং’ বা শুল্কের রাজা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেল আমদানিতে ভারত যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে, তা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। যদিও পরে ভারত শুল্ক কমিয়েছে, তারপরও ট্রাম্প সমালোচনামুখর রয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভারত অনেক বেশি শুল্ক নেয়।’

মার-আ-লাগোতে একটি সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, যখন অন্য দেশগুলো যেমন, ভারত এবং ব্রাজিল, আমেরিকায় একটি সাইকেল পাঠায়, তখন তারা প্রায়ই ১০০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। তিনি জানান, যদি তারা এমন ফি আরোপ করতে চায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উচিত সাবধানতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া। ভারতের রফতানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের লোভনীয় বাজারে তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল করতে পারে। বিশেষ করে এটি আইটি এবং টেক্সটাইলের মতো শিল্পগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, যা ব্যাপকভাবে আমেরিকান গ্রাহকদের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া, শুল্কের হুমকি আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে ভারতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেমে যেতে পারে।

ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে প্রশাসনের কঠোর বাণিজ্য নীতির কারণে ভারত তার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারিয়েছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় শাসনামলেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা প্রবল, বিশেষ করে যদি ভারত মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার এবং শুল্ক বাধার বিষয়ে তাদের উদ্বেগ দূর না করে।

তবে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা সত্ত্বেও ট্রাম্পের প্রথম শাসনকালে ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক গভীর হয়েছিল। হাউডি মোদি এবং নমস্তে ট্রাম্পের মতো অনুষ্ঠানগুলো দুই দেশের ক্রমবর্ধমান মৈত্রী প্রদর্শন করেছিল। ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয়েই চীনকে একটি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেছিলেন, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের নীতিগুলো একত্রিত করতে সাহায্য করেছিল।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে এলে এই সংযুক্তি ভারতের পক্ষে কাজ করতে পারে। প্রতিরক্ষা এবং ভূরাজনীতিতে শক্তিশালী ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব কিছু বাণিজ্য-সম্পর্কিত উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারে। তবে ভারতকে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোরভাবে আলোচনা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার কৌশলগত গুরুত্বকে কাজে লাগাতে হবে।

সামনের দিনগুলোর জন্য ভারতের একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। একদিকে তার নিজস্ব দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে শুল্ক এবং অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যদিকে তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাণিজ্য নীতিগুলো তার বৃহত্তম রফতানি বাজারকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে কি না।

লক্ষ্যভিত্তিক শুল্ক হ্রাস এবং আমেরিকান পণ্যের জন্য অধিকতর বাজার প্রবেশাধিকার প্রদান এই ভারসাম্য অর্জনের একটি উপায় হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একই সময়ে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পারস্পরিক সুবিধা, যেমন তার জিএসপি মর্যাদা পুনর্বহালের জন্যও চাপ দিতে হবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

এছাড়া ভারতকে তার রফতানি বাজারগুলোকে বৈচিত্র্যময় করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়। অন্যান্য দেশ এবং অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা যুক্তরাষ্ট্র-কেন্দ্রিক বাণিজ্য নীতির সম্ভাব্য প্রভাব থেকে সুরক্ষার আরো একটি উপায় হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *