কর্মীদের বেতন বাড়ালেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট, সর্বোচ্চ ৫০%

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাস না যেতেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ফারুক আহমেদ, যিনি এরই মধ্যে সেটি বাস্তবায়নও করেছেন।

বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি ৩০ অক্টোবর ১৫তম বোর্ড সভায় তুলে ধরেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন। তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বোর্ড সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে ফারুক আহমেদ বিসিবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ২১ আগস্ট।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ বিবেচনায় নিয়ে ক্যাটগরি ভাগ করেছে বিসিবি কর্তৃপক্ষ। তিন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বেতন বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের আভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়ায় এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চাননি তিনি।

ক্যাটাগরি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যারা ২৫ বছর বা তার বেশি সময় ক্রিকেট বোর্ডে চাকরি করছেন, তাদের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বেতন বেড়েছে। ১০ বছর কিংবা তার বেশি চাকরি করাদের বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আর যারা দুই ক্যাটাগরির কোনোটার মধ্যেই পড়েননি, তাদের বেড়েছে ৫ শতাংশ।

মোবাইল ফোনে কথা হলে নিজাম উদ্দিন বলেন, “বেতন পর্যালোচনা সবসময় হয়ে থাকে। এখন নতুন প্রেসিডেন্ট (ফারুক আহমেদ) আসার পর এটা তিনি পুনরায় দেখছেন। দেখে দেখে ধাপে ধাপে প্রেসিডেন্ট এটার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বৃদ্ধি নিয়ে কাজ চলছে। এর বাইরে কিছু বলা ঠিক হবে না।”

বেতন বৃদ্ধি খুশির খবর হলেও বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি। তবে একটি সূত্র বলেছে, দ্রব্যমূল্য প্রায় দিগুণ হয়ে গেছে। জীবনযাত্রা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বেতন বাড়ানোটা খুবই যৌক্তিক পদক্ষেপ।

ওই সূত্রটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার চারবার বেতন বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বিসিবিতে সেটি হয়নি। তাই সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিসিবির জন্য নতুন পে-স্কেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দশ বছরের বেশি ক্রিকেট বোর্ডে চাকরি করেছে এবং তাদের বেতন বেড়েছে; এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা করেছে । তবে কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য- এরইমধ্যে তারা বৃদ্ধি হওয়া বেতন পেয়েছেনও।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “নতুন প্রেসিডেন্ট মহোদয় বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এখানে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন বছরের পর বছর ধরে। একটা বৈষম্য ছিল। সেটা এখন দূর হয়েছে। আমরা খুশি।”

বিসিবির অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উঁচুসারির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গাড়িচালক, অধস্থন কর্মচারী (এমএলএসএস-লোয়ার সাব-অর্ডিনেট স্টাফ) সবারই বেতন বেড়েছে। সব মিলে ৯৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বেড়েছে। টাকার অঙ্কে সবার বর্ধিত বেতনের মোট পরিমাণ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এদিকে শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, পে-স্কেল সংশোধন করে তা নতুনভাবে তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে বিসিবিতে। বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পে-স্কেল সংশোধন করা হয় ১১ বছর আগে; সেই ২০১৩ সালে। সেবার মোট বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। আর পে-স্কেল গঠন করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। সবশেষ সংশোধন হওয়ার পর তার ভিত্তিতে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি।

পে-স্কেল গঠনের বিষয়ে বিসিবির বোর্ড সভায় সবাই সায় দিয়েছেন। একজন কর্মকর্তা তার নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেছেন, “বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পে-স্কেল গঠন করে পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।”

পে-স্কেলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বিস্তারিত বলতে চাননি। একেও তিনি ‘সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, “এটা তো আর সরকারি প্রতিষ্ঠান না। যখন যেটা প্রয়োজন হবে, তখন সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী আমাদের কাজ শুরু হয়েছে।”

“এটা আসলে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর সম্পর্ক। এটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলার অথরিটি আমার নেই। আপনার যেখানে চাকরি, সেখানকার স্যালারি নিয়েও আমার জানার অথরিটি নেই। আসলে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর বিষয় এটি। আমি বলতে পারব না, সেনসিটিব বিষয় তো এটা,” যোগ করেন করেন নিজাম উদ্দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *