সরকার ধান-চাল সংগ্রহ বাড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার কারণে ধানের উৎপাদন কমতে পারে। তাই চলতি অর্থবছরে দেশে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা ও পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত নিশ্চিতে কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি ধান ও চাল সংগ্রহ করছে সরকার। ডলার সাশ্রয় ও কৃষিকদের উৎসাহিত করতে আগামীতেও স্থানীয় উৎস থেকে বাড়তি ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছর সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ডিসেম্বরের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ চাল দেশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে খাদ্যশস্যের মজুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আগামী করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে গত ৬ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে বাড়তি ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ৩০ হাজার ৩৫৯ টন সিদ্ধ এবং ২৪ হাজার ৭৮৭ টন আতপ চাল সংগ্রহের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কার্যপত্র অনুযায়ী, গত বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বোরো সংগ্রহের নির্ধারিত সময়ে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পরও খাদ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবতার নিরিখে ডলার সাশ্রয় এবং কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের প্রণোদনা মূল্য নিশ্চিত করতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে।

সভায় গতবারের চেয়ে বেশ কিছুটা বাড়িয়ে আসছে আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। দামও গতবারের চেয়ে কেজিতে তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। আমন মৌসুমে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান ও সাড়ে ৫ লাখ টন চাল এবং এক লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পাওয়া সাপেক্ষে এই লক্ষ্যমাত্রার বাড়তিও সংগ্রহ করার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সরকারি খাতে এই অর্থবছরে মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার টন চালের চাহিদা রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের প্রায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত ছিল। এর মধ্যে ৮ লাখ ২৩ হাজার টন চাল, ৬৬৮ টন ধান এবং ৪ লাখ ৩২ হাজার টন গম রয়েছে। ৩১ অক্টোবর এই মজুতের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন। সার্বিক বিবেচনায় এ মজুতকে পর্যাপ্ত মনে করছে না সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত নিশ্চিত করতে সরকার চলতি অর্থবছর সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে অন্তত ২ লাখ টন এবং সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) চুক্তির মাধ্যমে আরও ৩ লাখ টন চাল আমদানি করার লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়। ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে জিটুজি এবং ভারত থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।

বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) গতকালের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে পাইজামসহ মাঝারি মানের চালের দাম ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া মোটা ও সরু চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এদিকে আমন মৌসুম শুরু হলেও চালের দাম বাড়ছে এবং সরকারি খাদ্য মজুতও কমে আসছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার আমদানি শুল্ক ও কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে, যাতে সরবরাহ বাড়ানো এবং পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা যায়। তবে এসব পদক্ষেপের পরও বাজারে চালের দামের ওপর প্রভাব পড়েনি, কারণ ব্যবসায়ীরা আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

গত ১৪ নভেম্বর খাদ্য ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, বেসরকারি খাতে চাল আমদানির জন্য ১৩৪ জন ব্যবসায়ীকে ১০ লাখ ৫২ হাজার টন চাল আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেদিন পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ৫০০ টন চালের জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে এবং এই এলসির বেশির ভাগ চাল ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছে গেছে বলে তিনি জানান।

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বন্যার কারণে ফেনী, নোয়াখালীসহ কয়েকটি অঞ্চলে চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কৃষি মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টন উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা করলেও, পরে সেটি কমিয়ে আনুমানিক ৬-৭ লাখ টন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *