রেমিটেন্স সংগ্রহে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে

জীবন ইসলাম

রেমিটেন্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম এবং দেশি বিদেশী সকল ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি। রেমিটেন্স সংগ্রহে যেকোনো মূল্যে সকল ব্যাংকের মধ্যে প্রথম হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার অগ্রণী ব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ে এ প্রতিবেদককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহসদ।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে রেমিটেন্স এসেছিল ১১,৯৩৪ কোটি টাকার। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ১১,৩৮৫ কোটি টাকার। অগ্রণী ব্যাংকের ৯৭৮টি শাখা, ৫৫০টি এজেন্ট ব্যাংকিং; মালয়েশিয়া ও শিঙ্গাপুরে দুটি সাবসিডিয়ারি হাউজ সহ বিশ্বব্যাপী ৮৭টি এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে remittance সংগ্রহ করা হয়। আশাবাদী অতি অল্প সময়ের মধ্যে রেমিটেন্স সংগ্রহে শীর্ষস্থান দখল করবে অগ্রণী ব্যাংক।

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহসদ বলেন, ব্যাংক ঋণ যাচাই বাছাই করে অনুমোদন করবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ম্যানেজমেন্ট। তা না করে ঋণ অনুমোদন করে ব্যাংকের বোর্ড। বোর্ড ঋণ অনুমোদন করতে না পারলে- তা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন করে দেয়। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যান তথা বোর্ড পলিসি প্রদান করবে আর তা বাস্তবায়ন করবে প্রধান নির্বাহী তথা ম্যানেজমেন্ট। চেয়ারম্যান তথা বোর্ড হচ্ছে- মালিকপক্ষ। প্রতিষ্ঠান লাভ করলে মালিকপক্ষ আর্থিক সবিধা পাবে। পাশাপাশি শেয়ারের দাম বাড়লে- যার সুবিধা ভোগ করবে মালিকপক্ষ। কিন্তু এসবের বালাই ব্যাংকে নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহস বলেন, আমি (২০০৪-২০১০) ছয় বছর অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলাম। ব্যাংকটিকে সে সময় যে অবস্থানে রেখে গিয়েছিলাম; এখন সেই অবস্থানে নেই। তখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ইতোমধ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তিন বছর মেয়াদে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছি। যোগদান করেই একটা জুম মিটিং করেছি। ওই জুম মিটিংয়ে ব্যাংকের সকল শাখা ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। তাদের দায়িত্ব দিয়েছি- যে কোনোভাবেই হোক খেলাপি ঋণ আদায়ে অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সকল শাখা ম্যানেজারকে বলেছি, খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করবে। প্রয়োজনে খেলাপি ঋণ গ্রহীতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যোগাযোগ করবে। মাত্র ২ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে খেলাপি থেকে বের হয়ে আসা যায়। এই সুযোগ খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের বুঝাতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে সর্বদা শাখা ম্যানেজারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহসদ বলেন, ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যে দেশে পাচার করা হয়েছে- সেই দেশে একজন রিচ বাঙালী হয়েছেন। টাকাটা দেশে থাকলে কর্মসংস্থান হত, দেশ ও জাতির উন্নয়ন গত। কিন্তু বিদেশে পাচার করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনা কঠিন কাজ। তবে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করা হয়েছে- তা প্রমান সাপেক্ষে যে দেশে পাচার করা হয়েছে, সেই দেশে পাচারকৃত ব্যক্তির যদি সম্পদ থাকে এবং ওই সম্পদ বিক্রিলব্ধ অর্থ ফেরৎ আনা যাবে। তবে তা অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে কন্ট্রাক থাকতে হবে। দুদেশের মধ্যে কন্ট্রাক না থাকলে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনা সম্ভব না।

পদোন্নতী ও অস্থায়ী কর্মচারী সম্পর্কে তিনি বলেন, ১০০০ জনের বেশি অস্থায়ী কর্মচারী আছে- যারা স্থায়ী হবার জন্য দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ১৫০০ জনের বেশি পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছন। তারা পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে। অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করা ছাড়া এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রায় এক বছর সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ক্যাপিটাল সর্টফল আছে অগ্রণী ব্যাংকে। ক্যাপিটাল ১০ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের তারল্য সংকট মোকাবেলা করার জন্য চলতি বছর বড় ধরনের কোনো ঋণ অনুমোদন না করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

কোর ব্যাংকিং তথা অনলাইন ব্যাংকিং আমার সময়ে (২০০৪-২০১০) চালু করেছিলাম। কিন্তু তা আশানুরুপ অগ্রসর হয়নি। অনলাইন ব্যাংকিং আরো গতিশীল, আরো গ্রাহক বান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, স্বতন্ত্র পরিচালক সম্মানী পায় ৫০,০০০ টাকা; আর ব্যাংকের চেয়ারম্যান সম্মানী পায় ৩০,০০০ টাকা। অন্য পরিচালকরা কোনো সম্মানী পান না। তবে বোর্ড মিটিংয়ের দিন চেয়ারম্যান সহ প্রত্যেক পরিচালক ১০,০০০ টাকা করে সম্মানী পেয়ে থাকেন। এই সম্মানী থেকে ১০ শতাংশ হারে ট্যাক্স কাটা হয়। এ অবস্থায় চেয়ারম্যানের সম্মানী ১,০০০০০ টাকা করা অত্যাবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *