নারীদের অ্যাকাউন্ট বেশি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে, সঞ্চয় কম

স্টাফ রিপোর্টার

যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে বেশ জনপ্রিয় এজেন্ট ব্যাংকিং। কম খরচে ও দ্রুত সময়ে ব্যাংকের প্রায় সব সেবাই মিলছে এজেন্ট বুথে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক ও আমানত। ঋণ বিতরণেও হচ্ছে বড় প্রবৃদ্ধি। গত জুন শেষে এ সেবায় গ্রাহক ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। গত এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৩২ লাখ। আর আমানত ও ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ২০ শতাংশ ও ৪৪ শতাংশ। পুরুষের চেয়ে নারীরা এ সেবায় বেশি যুক্ত হয়েছেন। তবে সঞ্চয়ে পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নারীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটা ব্যাংকের খরচও বাঁচিয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং হলো- শাখা না খুলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং করার সুযোগ দেওয়া হলেও পরের বছর নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর সুযোগ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংকে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যার সবকটিই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসাবাড়ির নিচে বা বাসাবাড়ি থেকে একটু দূরে স্থানীয় হাটবাজারে এজেন্ট আউটলেট বা বুথেই ব্যাংকের মতো প্রায় সব ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের

আঙুলের ছাপের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা থেকে শুরু করে আমানতের টাকা জমা ও উত্তোলন, মোবাইল টপ-আপ, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলন, ইউটিলিটি বিল এবং যানবাহনের লাইসেন্স ও ফিটনেস ফি গ্রহণ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সকল প্রকার ভাতা এ সেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ সেবায় বাড়তি কোনো চার্জও নেই। এ ছাড়া ডেবিট কার্ড, চেক বই ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সুবিধাও নিতে পারেন এজেন্ট ব্যংকিংয়ের গ্রাহকরা। ফলে এ সেবার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতি ত্রৈমাসিকে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সোমবার সেপ্টেম্বর ৯  জুনভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় গ্রাহকদের খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৩০,৩৪,৫৩৮টি, যা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল ১,৯৮,৫২,২৪০টি। ফলে গত এক বছরে এই সেবার আওতায় গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৩১,৮২,২৯৮ জন। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে বেড়েছে ৭,৮৪,২৩৩ জন। প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯৮,২৫,২৬৬ জন, যা মোট গ্রাহকের প্রায় ৮৬ শতাংশ।

অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন ১,১৫,১২,৪৮৪ জন, যা মোট গ্রাহকের ৪৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর পুরুষ গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১২,৩৭,৫৩৪ জন, যা মোট গ্রাহকের ৪৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য গ্রাহক রয়েছে ২,৮৪,৫২০ জন বা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গ্রাহক বাড়ায় আমানত সংগ্রহেও আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের জুন শেষে বেড়ে হয়েছে ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানত বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার ৬১১ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৩ হাজার ২০৩ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিয়ের আমানত তথা সঞ্চয়ে এগিয়ে রয়েছেন পুরুষরা। গত জুন পর্যন্ত পুরুষদের আমানত দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ সময়ে নারীদের আমানত তথা সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিয়ের কল্যাণে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ঋণও পাচ্ছে। প্রতিবেদন বলছে, গত জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল ১৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এই সেবায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বা ৪৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

শুধু আমানত ও ঋণ বিতরণই নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আওতায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বিতরণেও বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিয়ের আওতায় রেমিট্যান্স বিতরণ বেড়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে রেমিট্যান্স বিতরণ বেড়েছে ৮ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *