পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার

বিভিন্ন অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতিতে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে ৮টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠনের জন্য বিবেচনায় রয়েছে আরও ৬টি ব্যাংক। মঙ্গলবার (সেপ্টেম্বর ০৩)থেকে পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এসব ব্যাংকের ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী, বন্ধকি সম্পত্তির চিত্র, আদায় পরিকল্পনা, তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে ভাবনা এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাসহ বৈঠকে আসতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আমানতকারীর টাকা ফেরতে ব্যাংকগুলো কী ভাবছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন গভর্নর। ব্যাংকটি এতদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে ইউসিবির নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্যদিকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী শনাক্ত ও আদায় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রতিবেদন থাকতে হবে। এসব ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি বা জামানত থেকে কী পরিমাণ ঋণ আদায় করা সম্ভব। এ ছাড়া ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা আনতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে– ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে পরিকল্পনা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব ঋণাত্মক থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। নগদ জমা সংরক্ষণ অনুপাত (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) ঘাটতি মেটানোর উপায় জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরিকল্পনা পেশ করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত এতদিন এসব ব্যাংক যাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তারা কী পরিমাণ ঋণ বের করেছে এবং এর বিপরীতে জামানতের অবস্থা জানা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য। আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে কিনা, তা জানা দরকার। তিনি বলেন, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বেআইনিভাবে কয়েকটি ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি রেখে লেনদেনের সুযোগ দিলেও এখন তা বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে এসব ব্যাংক চাহিদা মতো আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এই সংকট কাটাতে তাদের পরিকল্পনা কী, বৈঠকে তা জানাতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তহবিল চায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া অনেক ভালো ঋণ গ্রহীতাও এখন আর কিস্তি দিচ্ছে না। তাদের থেকে ঋণ আদায় যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানা গেছে, আরও যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। সম্প্রতি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে এস আলমের ভাই আব্দুস সামাদ লাবু সরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের আত্মীয় চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা কেডিএস গ্রুপের সেলিম রহমানকে। এ ছাড়া এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইএফআইসি ব্যাংক, সমস্যাগ্রস্ত এবি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হলেও কৌশলগত কারণে এখনই ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। তবে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। এমনকি প্রধান কার্যালয়ের অনেকে ফোনও ধরছেন না। বরং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্তদের কেউ কেউ এরই মধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছেন। অবশ্য ঋণের নামে যেন নতুন করে অর্থ বের করতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা বের করতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *