রাষ্ট্রায়ত্ত ৫৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৫১ হাজার কোটি টাকা
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৫১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা পাওনা আছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে। এছাড়া বড় অংকের টাকার মধ্যে চিনিকলগুলোর কাছে পাওনা প্রায় ৭ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। সার, রাসায়নিক ও ওষুধ শিল্পের কাছে পাওনা ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে পাওনা ৫ হাজার ১৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ বিমানের কাছে পাওনা ৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল কাদের আজাদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকদের বার্ষিক আয়সংশ্লিষ্ট তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত নেই। তবে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকরা তাদের আয় থেকে ১৩০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন (১৩ কোটি ৫৮ লাখ) ডলার নিজ নিজ দেশে নিয়ে গেছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার গেছে ভারতে। এছাড়া চীনে ১৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলংকায় ১২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার, জাপানে ৬ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার, কোরিয়ায় ৬ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার, থাইল্যান্ডে ৫ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানে ৩ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে ৩ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার ও অন্যান্য দেশে গেছে ২১ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলার।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কোনো ব্যাংকে আর্থিক সংকট নেই। তবে কতিপয় ব্যাংকে উচ্চ খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও তারল্য সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে কর্মকর্তা নয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক হিসেবে এবং সাতটি ব্যাংকে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।’
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মূল্যস্ফীতির চলমান সংকটের মূলে রয়েছে— বৈশ্বিক পণ্যবাজারে সরবরাহে অনিশ্চয়তা, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং দেশের বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি।
তিনি আরো জানান, অর্থনৈতিক এ সংকট কাটিয়ে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত হ্রাস পাওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আস্থাহীনতা বা মূল্যস্ফীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত কমছে না। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় মানুষ আমানত তুলে বিনিয়োগ করছে।’