আবগারি শুল্ক দিতে হবে প্রত্যেক ঋণচুক্তির জন্য
গ্রাহকদের মূল হিসাবের পাশাপাশি প্রত্যেক ঋণচুক্তির বিপরীতে আবগারি শুল্ক কর্তন করতে হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দেশী-বিদেশী, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যেকোনো ঋণচুক্তির বিপরীতে রসিদ ইস্যু (এলএটিআর) হলেই প্রত্যেকবারের সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর এ আবগারি শুল্ক কর্তন করার জন্য সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।
গ্রাহক হিসাব থেকে দেশের ব্যাংকগুলোর আবগারি শুল্ক কর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত একটি চিঠির জবাবে সম্প্রতি এসব নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বরাবর এনবিআরের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নীতির দ্বিতীয় সচিব মো. তারেক হাসান স্বাক্ষরিত এনবিআরের এক নির্দেশনায় এসব তথ্য জানানো হয়।
এর ফলে একটি মাস্টার হিসাবের বিপরীতে যতগুলো এলএটিআর ইস্যু করা হবে, প্রত্যেকটির সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক কেটে নেবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ঋণ নেয়ার পর উভয় হিসাব (ঋণ ইস্যুকৃত হিসাব ও স্থানান্তরকৃত হিসাব) থেকেও আবগারি শুল্ক কর্তন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকের হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর বছরে একবার নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক কাটার বিধান রয়েছে আবগারি শুল্ক ও সল্ট আইনে। অনেক আগে থেকেই ব্যাংকগুলো এ কর কর্তন করে এনবিআরে জমা দিয়ে আসছে। বর্তমানে কোনো হিসাবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা স্থিতি হলেই আবগারি শুল্ক কর্তন করতে হয়।
তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের বিপরীতে গৃহীত অঙ্গীকারনামা বা প্রতিটি ঋণ সুবিধার বিপরীতে এ শুল্ক কর্তন করবে কিনা তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা করে প্রতিটি ঋণচুক্তির বিপরীতে আবগারি শুল্ক কর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। দেশের সব বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংককে বিষয়টি অবহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি চুক্তির সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ টাকার বেশি স্থিতি হলেই ব্যাংক হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক কর্তনের বিধান করা হয়। অর্থ আইন অনুযায়ী ১ লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির বিপরীতে ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হিসাবের বিপরীতে এ শুল্ক কাটা হচ্ছে ৫০০ টাকা। একইভাবে ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটির ঊর্ধ্ব থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১২ হাজার ও ৫ কোটির ঊর্ধ্বে হলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। বছরে একবারের জন্য যেকোনো ব্যাংক হিসাব থেকে কেটে নেয়া আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হচ্ছে আমানতের ক্ষেত্রে।
তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ঋণচুক্তি শেষে রসিদ গৃহীত হলেই আবগারি শুল্ক কর্তন করতে হবে। আবার ঋণের অর্থ তুলে নতুন হিসাবে স্থানান্তর করলেও আবগারি শুল্ক দিতে হবে গ্রাহককে।
নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে একজন গ্রাহককে একই হিসাবে একাধিকবার আবগারি শুল্ক দিতে হবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, একই হিসাবে একাধিকবার ঋণ সুবিধা নিয়ে থাকেন কোনো কোনো গ্রাহক।
একটি মাস্টার অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি এলএটিআর অ্যাকাউন্ট থাকে অনেক গ্রাহকের। প্রতিটি এলএটিআর অ্যাকাউন্টে এ শুল্ক কর্তন করলে তা গ্রাহকদের ব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে। প্রত্যেক ঋণচুক্তির বিপরীতে আবগারি শুল্ক কর্তন করা হলে তা আবগারি শুল্কের বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে অতিরিক্ত হবে।
এ বিষয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি হলে ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহকের একটি হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর বছরে একবার আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হয়। বড় গ্রাহকদের একটি মাস্টার অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি অনেক এলএটিআর হয়। এরূপ প্রতিটি চুক্তির বিপরীতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হলে তা গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করবে।
এক গ্রাহক ও একই ঋণে একাধিকবার আবগারি শুল্ক ধার্যের বিষয়টি ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়াগত সমস্যার কারণে হয় বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ব্যাংক গ্রাহককে দেয়া ঋণের টাকা অন্য একটি হিসাব খুলে সেটিতে স্থানান্তর করে।
ওই হিসাবে যখন ঋণের টাকা স্থানান্তর হয়, তখন সেটি স্বাভাবিক ব্যাংক স্থিতি হিসেবে দেখায়। এ কারণে ঋণ হিসাব ও আমানতের হিসাবকে আলাদা করে বিবেচনা করার সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে প্রতিটি এলএটিআরকে একটি অ্যাকাউন্ট বিবেচনা করায় আইন অনুযায়ী প্রতিটি চুক্তির বিপরীতে সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হয়।