যশোরে ৩০ কিলোমিটার সড়কে রাটিং
যশোরে বিভিন্ন সড়কে রাটিং দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাটিং রয়েছে যশোর-খুলনা মহাসড়কে। সড়কটি নির্মাণের আট মাসেই ১৮ কিলোমিটারজুড়ে রাটিং দেখা দিয়েছে। এছাড়া যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন বিভিন্ন সড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটারে রাটিং রয়েছে। ডেবে যাওয়া এসব সড়কে চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। অথচ গত ১০ বছরে এসব সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকার ব্যয় করেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
সড়কের যে অংশের ওপর দিয়ে বেশির ভাগ যানবাহনের চাকা যায়, সেখানে চাকার আকৃতির সমান বা তার চেয়ে বেশি অংশ সমান্তরালে ডেবে যাওয়ার ঘটনাকে প্রকৌশলীদের ভাষায় রাটিং বলা হয়। সাধারণত সড়কে নিম্নমানের বিটুমিন কিংবা সঠিক নিয়মে উপকরণ ব্যবহার না করলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ওভারলোডের পাশাপাশি নির্মাণকাজের মান যথাযথ না হলেও এমনটি ঘটতে পারে। আবার সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজন নিয়ে যানবাহন চললেও রাটিং দেখা দিতে পারে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ হয়। নির্মাণের আট মাসেই সড়কের ১৮ কিলোমিটারে রাটিং দেখা দিয়েছে। এছাড়া সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার ভাঙা, যা কংক্রিট রাস্তা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চার কিলোমিটার রাস্তা প্রথম পর্যায়ে কংক্রিট বা ঢালাই রাস্তা করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ওই সড়ক ছাড়াও চাঁচড়া-পালবাড়ী ও পালবাড়ী-মান্দার তলায় ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে রাটিং দেখা দিয়েছে। আরবপুর, পালবাড়ী, বোর্ড অফিসের সামনে, রূপদিয়া, মুড়লী, বসুন্দিয়া, পদ্মবিলা ও অভয়নগরের নওয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন সড়কেও রাটিং রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘যশোর-খুলনা মহাড়কের কিছু স্থানে আঁকা-বাঁকা হয়ে ফুলে উঠছিল। আমাদের পরামর্শক সড়কের ১৭ কিলোমিটার কংক্রিট করার জন্য বলেছে। আমরা সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে শহরের মুড়লী রেলক্রসিং থেকে নওয়াপাড়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয়টি রেলক্রসিংয়ে চার কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ১৭ কিলোমিটার সড়কে ঢালাই করা হবে।’
সওজ সূত্র জানায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার উন্নয়নে ৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। মহাসড়কটি যশোর শহরতলীর পালবাড়ী মোড় থেকে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার রাজঘাট পর্যন্ত নতুন করে নির্মিত হয়। ২৭ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটি বর্তমানে ২৪ ফুট চওড়া রয়েছে। এটি আরো ১০ ফুট বাড়িয়ে ৩৪ ফুট চওড়া ও দুই লেন করা হয়। নির্মাণকাজ চলমান অবস্থায় সড়কে রাটিং দেখা দিলে বুয়েটের একজন শিক্ষককে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। তিনি সরজমিন ঘুরে সড়কের দুই পাশে ওয়্যারিং করার সুপারিশ করেছিলেন।
এদিকে সড়ক নির্মাণের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, সড়ক উন্নয়নের এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের কোনো নিয়মনীতি মানেনি। তারা ইচ্ছামতো কাজ চালিয়ে গেছে। সড়কের পুরনো ইট ও খোয়া তুলে সেটাই আবার ভেঙে গর্তে ব্যবহার করেছে, যা দরপত্রে বলা হয়নি। এছাড়া সড়কটি পাঁচ ফুট গর্ত করে ভিত তৈরির নির্দেশনা থাকলেও সে নিয়মও মানেনি।
এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমরা সড়ক উন্নয়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছি। যেসব সড়কে রাটিং দেখা দিয়েছে সেখানে আমরা চলাচল উপযোগী করছি। যশোর-খুলনা সড়কে কাজ চলমান থাকা অবস্থায় কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছিল। সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। পরামর্শকের মতামত অনুযায়ী সেখানে চার কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা করা হচ্ছে। রাটিং তো বিভিন্ন কারণে হয়। একটা বড় কারণ হলো বিটুমিন। আগে সড়ক নির্মাণে আমরা ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করতাম। এখন আরো উন্নত বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আরেকটি কারণ হলো যানবাহনের ওভারলোড। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড লোডিং প্যাটার্ন হলো, ছয় চাকার দুই এক্সেলের গাড়িগুলোয় সাড়ে ১৫ টন পর্যন্ত ভার বহন করা যাবে। আর ১০ চাকার তিন এক্সেলের জন্য সর্বোচ্চ ওজনসীমা ২৩ টন। কিন্তু সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দুই এক্সেলের যানবাহনে সর্বোচ্চ ২২ টন, আর তিন এক্সেলের যানবাহনের জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে ২৭ টন ওজন বহনের অনুমতি দিয়েছে। এতেও সড়কের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’