জাপান-বাংলাদেশ ইপিএ স্বাক্ষরের রূপরেখা চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার

আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) করতে চায় বাংলাদেশ। চুক্তি স্বাক্ষরকে সামনে রেখে দুই দেশের যৌথ স্টাডি গ্রুপের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য, শুল্ক পদ্ধতি, বাণিজ্য সহজীকরণ, বিনিয়োগ, ইলেকট্রনিক বাণিজ্যসহ ১৭টি খাতের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে।

বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বক্তব্য রাখেন।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। পণ্য ছাড়াও সেবা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি হলে সে দেশের বাজারে ২০২৬ সালের পরও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছর সে দেশে বাংলাদেশ ১৯০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সঙ্গে জাপান থেকে বাংলাদেশ  ২০৯ কোটি  ডলারের সমপরিমাণ আমদানি করছে। এ চুক্তি হলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে। জাপানের সঙ্গে ইপিএ কেবল বাণিজ্যের মধ্যেই সীমিত থাকবে না, বিনিয়োগ, সরকারি ক্রয়সহ সেবা খাতও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরও বাড়বে। এতে করে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদেশি বিনিয়োগ বাড়িয়ে মধ্যবর্তী পণ্য রপ্তানির পথ সুগম হবে।

জাপানের সঙ্গে চূড়ান্তভাবে এ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা কতটুকু– এমন প্রশ্নের উত্তরে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এ প্রতিবেদন প্রকাশ মানেই শেষ নয়। চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার লক্ষ্যেই দুই দেশ যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়ে ঘোষণা দেয় এবং তিন রাউন্ডের সভা শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন, যা প্রকাশ করা হলো। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি ২০২৬ সালের মধ্যে উভয় দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

জাপানের ইপিএ হলে বাংলাদেশ কী পরিমাণ লাভবান হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখান থেকে লাভবান হবে। তবে কী পরিমাণ লাভবান হবে, তা  টাকার অঙ্কে বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া জাপানের সঙ্গে চুক্তিটি হলে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গেও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথ সহজ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইপিএ বাংলাদেশ এবং জাপান উভয়ের জন্য উইন উইন পরিস্থিতি তৈরি করবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উন্নয়নে ইপিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইপিএর স্বাক্ষরের জন্য উভয় দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের যেহেতু ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণ ঘটবে, এর আগে ইপিএ হবে।

জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপের প্রতিবেদনে চিহ্নিত খাতগুলো হচ্ছে– পণ্যের বাণিজ্য, বাণিজ্য সহজীকরণ, বাণিজ্যে বাধা দূর করার ব্যবস্থা, শুল্ক পদ্ধতি এবং বাণিজ্য সুবিধা (সিপিটিএফ), বাণিজ্যে প্রযুক্তিগত বাধা (টিবিটি), পরিষেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ,

ইলেকট্রনিক বাণিজ্য, সরকারি কেনাকাটা, মেধাস্বত্ব, প্রতিযোগিতা/ভর্তুকি/রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি, শ্রম, পরিবেশ, স্বচ্ছতা, সহযোগিতা এবং বিরোধ নিষ্পত্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *