সুদহার বাড়ছে ব্যাংক আমানতের

স্টাফ রিপোর্টার

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এখন মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। এর মধ্যে ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে এখন সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে তারল্যের চাহিদা থাকায় আমানতের সুদহার বাড়ছে। অন্যদিকে, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো তুলনামূলক বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৯ থেকে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে আমানত নিচ্ছে। ঋণের সুদহার যেখানে সাড়ে ১১ শতাংশের নিচে।

ব্যাংকাররা জানান, একটি ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ব্যয়ের সঙ্গে স্থাপনা ভাড়া, কর্মীদের বেতন-ভাতা, বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন খরচ যোগ হয়। এর সঙ্গে খেলাপি হওয়া অংশের বিপরীতে ব্যাংকের সুদ ব্যয় থাকলেও কোনো আয় দেখানো যায় না। মোট তহবিল সংগ্রহ খরচের সঙ্গে ২ থেকে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণ না দিলে লোকসান হয়। তবে সংকটে পড়া অনেক ব্যাংক এখন টিকে থাকার জন্য উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, পদ্মা ব্যাংক এখন মেয়াদি আমানত নিচ্ছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে। ন্যাশনাল ব্যাংক বিশেষ সঞ্চয় স্কিমে সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ তথা ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক তিন বছরমেয়াদি আমানতে রাখলে দিচ্ছে সাড়ে ৯ শতাংশ মুনাফা। সংকটে থাকা কোনো কোনো ব্যাংক আবার ঘোষণার চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে। তবে সব ব্যাংকই এত বাড়তি সুদে আমানত নিচ্ছে তেমন নয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংক তিন বছরমেয়াদি আমানতে সর্বোচ্চ সুদ দিচ্ছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকও মেয়াদি আমানতে সর্বোচ্চ সুদ দিচ্ছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকে তিন বছরমেয়াদি আমানত রাখলে সর্বোচ্চ মুনাফা দিচ্ছে ৭ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানান, সচেতন মানুষ আমানত রাখার ক্ষেত্রে সুদহারের চেয়ে যথাসময়ে ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার বিষয়টি বেশি বিবেচনায় নেয়। এজন্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদ অফার করলেও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত আমানত পায় না।

এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, সংকটে পড়া ব্যাংক অনেক সময় ঋণের সর্বোচ্চ সীমার বেশি সুদে আমানত নেয়। সাময়িক সংকট মেটানোর জন্য একটি ব্যাংক এমন করে থাকে। এটা বেআইনি নয়, তবে অনৈতিক। এ উপায়ে আমানত নিয়ে হয়তো ব্যাংকটি স্বল্প মেয়াদে টিকে থাকতে পারে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা  ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। এদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা কমে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮ কোটি টাকায় নেমেছে। গত অর্থবছর কমেছিল আরও ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, প্রতিটি ব্যাংক বছর শুরুতেই ঋণ ও আমানতের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। সে অনুযায়ী প্রতিটি শাখার জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। কোনো ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে মানুষ যদি টাকা তুলে নেয়, তখন সাধারণত উচ্চ সুদ দিয়ে আটকাতে চায়। ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকে মানুষ সুদ কম দিলেও টাকা রাখতে চায়।

তারল্য সংকটের কারণে এখন প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ধার নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। গত বুধবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা নেয় বিভিন্ন ব্যাংক। এদিন আন্তঃব্যাংক কলমানিসহ বিভিন্ন মেয়াদে নেয় আরও ৩ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এর বাইরে কয়েকটি ব্যাংককে  উপকরণ ছাড়াই ‘সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট’ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *