রুশ হীরা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান হীরা বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল (ইসি)। নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রাশিয়া হীরা আমদানি, পুনঃরফতানি বা লেনদেনে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় রাশিয়ার আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে আনতে নতুন করে নেয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসি। খবর আরটি।
জানা গেছে, মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় জোটের ১২তম প্যাকেজ নিষেধাজ্ঞার অংশ এটি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞাটি রাশিয়ায় উৎপন্ন হীরা, রাশিয়া থেকে রফতানি করা হীরা এবং তৃতীয় দেশে প্রক্রিয়া করা রাশিয়ান হীরা ও গয়নার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। প্রাকৃতিক হীরার পাশাপাশি কারখানায় তৈরি সিনথেটিক হীরাও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে। তবে তৃতীয় দেশে কাটা অথবা পলিশ করা রাশিয়ান হীরা বা হীরার গয়না আমদানি-রফতানি নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে ২০২৪ সালের ১ মার্চ থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কার্যকর করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে ইসি বলছে, জি৭ জোটের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস থেকে বঞ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে হীরা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এর আগে বেলজিয়াম পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়ান হীরা নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছিল। দেশটি সতর্ক বার্তায় বলেছিল, বিশ্বের ৯০ শতাংশ হীরাই বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প শহর ঘুরে ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছায়। সেখানকার ১০ হাজারের বেশি মানুষের জীবিকা ধাতুটির বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।
রুশ হীরার সবচেয়ে বড় ক্রেতাও বিশ্বের শীর্ষ হীরা বাণিজ্য কেন্দ্র এন্টওয়ার্প। এতদিন ধাতুটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আটকে ছিল মূলত বেলজিয়ামসহ প্রধান ক্রেতা দেশগুলোর আপত্তির কারণে। ব্রাসেলস প্রতিবারই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনায় বাধা দিয়ে বলেছে, এতে বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।
বেলজিয়ামের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে চোরাই পথে রুশ হীরার বাণিজ্য বেড়ে যাবে। এতে এন্টওয়ার্পের পরিবর্তে দুবাইয়ের হীরা বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পাশাপাশি রুশ হীরার বড় গন্তব্য হয়ে উঠবে চীন, ভারতের মতো দেশ। এতে ইউরোপের হীরার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে নিষেধাজ্ঞা কার্যত ব্যর্থই হবে।
বেলজিয়ামের এ আশঙ্কাকে মাথায় রেখে উন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ ও ইউরোপীয় কাউন্সিল হীরা বাণিজ্যে ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার হীরা প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তবে রাশিয়া এরই মধ্যে হীরা বাণিজ্যের জন্য চীন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্মেনিয়া ও বেলারুশের মতো বিকল্প বাজারমুখী হয়ে উঠেছে।
এদিকে জাতিসংঘের হীরার বাজারবিষয়ক সংস্থা কিম্বারলি প্রসেসের তথ্য বলছে, বৈশ্বিক উত্তোলনের এক-তৃতীয়াংশ হীরার উত্তোলক রাশিয়া। গত বছর শীর্ষ হীরা উত্তোলনকারী হিসেবেও স্থান করে নিয়েছিল দেশটি। আন্তর্জাতিক সংগঠনটির হিসাব মতে, ২০২২ সালে বিশ্বে মোট হীরা উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার ক্যারেট।
এর মধ্যে ৪ কোটি ১৯ লাখ ক্যারেট এসেছে রাশিয়া থেকে, যা মোট উত্তোলনের ৩৫ শতাংশ। ২০০৪ সাল থেকে কিম্বারলি প্রসেস হীরাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। সংস্থাটির এ পর্যন্ত রেকর্ডে থাকা তথ্য বলছে, এর আগে কখনই রাশিয়ার হীরা উত্তোলনের পরিমাণ মোট বৈশ্বিক উত্তোলনের ৩২ শতাংশের বেশি ছিল না।