কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা ৫৪০ কোটি টন ছাড়াবে
চলতি শতকের শুরুতে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে শুরু করে। তবে প্রবৃদ্ধির এ ধারায় ছেদ পড়ে ২০১৫ সালের দিকে এসে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সচেতনতা বেড়ে যাওয়া ও কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কয়লা ব্যবহার থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সরে আসার প্রবণতা এ অর্জনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তবে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় নিম্নমুখী এ প্রবণতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বাড়তে শুরু করেছে কয়লা ব্যবহার।
এ ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সাল নাগাদ কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা বর্তমানের তুলনায় বেড়ে ৫৪০ কোটি টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। মূলত ভারত, চীনসহ এশিয়ার দেশগুলোয় ক্রমবর্ধমান কয়লা ব্যবহার জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স, মাইনিংডটকম ও সিএনবিসি।
ইআইএর কোল-২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৩২৯ কোটি ৯০ লাখ টন কয়লা ব্যবহার হয়েছিল। এর পর থেকে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে শুরু করে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০০৫ সালে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৬ কোটি ৭০ লাখ টনে। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদার পরিমাণ আরো বেড়ে হয় ৫২০ কোটি ৬০ লাখ টন। ২০১৪ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় নতুন রেকর্ড হয়। এ বছর কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে ৫৬১ কোটি টনে পৌঁছে যায়। বিশ্বের ইতিহাসে এটাই কয়লা ব্যবহারের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
২০০৯ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ-১৫) বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। বেড়ে যায় সচেতনতা ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ। দীর্ঘ আলোচলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২১) স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রথম বৈশ্বিক আইনি ভিত্তি ধরা হয় এ চুক্তিকে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বব্যাপী যখন আলোচনা তুঙ্গে রয়েছে— স্বাক্ষর হয় বৈশ্বিক চুক্তি— ঠিক সেই সময়টায় কয়লার বৈশ্বিক চাহিদাও কমে আসে। আইইএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় কমে দাঁড়ায় ৫৪৯ কোটি টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ কোটি টন কম।
পরের বছর (২০১৬ সাল) জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা আরো কমে দাঁড়ায় ৫৩০ কোটি ৮০ লাখ টনে। এর পর থেকে ফের জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৩৫ কোটি ৫০ লাখ টন কয়লা ব্যবহার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আইইএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টন বেশি।
এর পর থেকে প্রতি বছর কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইইএ। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৫৩৮ কোটি ৯০ লাখ টনে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ আরো বেড়ে ৫৪১ কোটি ৫ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। আর পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা আরো বেড়ে ৫৪১ কোটি ৮০ লাখ টনে পৌঁছে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি। সেই হিসাবে ২০২৩ সাল নাগাদ গত বছরের তুলনায় বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত ৬ কোটি ৩০ লাখ টন কয়লা ব্যবহার হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো কয়লা ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছে। অনেক দেশই জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বিপরীতে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলো কয়লার নতুন বাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামী দিনগুলোয় এ প্রবণতা জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।