কলকাতায় তোড়জোড়, বাংলাদেশি পর্যটক টানতে
কলকাতার প্রাণকেন্দ্র বলতে সবাই বোঝে ধর্মতলা নিউমার্কেট। এই এলাকার মার্কুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, রফিক আহমেদ কিঁদয় স্ট্রিট, কিডস স্ট্রিট, টটিলেনে সারা বছরই থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা। বিশেষ করে, বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্তত পছন্দের জায়গা এটি। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই এই এলাকাকে কলকাতার মধ্যে ‘মিনি বাংলাদেশ’ বলে থাকেন।
কলকাতার এই নিউমার্কেট চত্বরে আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল। সেগুলোর পাশাপাশি এ এলাকার খাবারের দোকান, জুতা, পোশাক, গহনাসহ অন্যান্য ব্যবসাগুলোও অনেকটাই বাংলাদেশি পর্যটকনির্ভর।
তবে, বাংলাদেশির লক্ষ্য করে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় যেমন বাড়ছে ব্যবসা, তার সঙ্গে বাড়ছে বিড়ম্বনাও। অনেক সময় দেখা গেছে, কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগটি খোয়া গেছে। কিংবা পকেটে থাকা ডলার গায়েব হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলছেন। এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার ফাঁদ তো রয়েছেই।
এ অবস্থায় বাংলাদেশি পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য কয়েক মাস আগে নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা ৩২টি সিসি ক্যামেরা লাগান। সেসময় নিউমার্কেট অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি হেল্পডেস্ক খোলা হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
অবশেষে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হলো। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশি পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য নিউমার্কেট চত্বর সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। খোলা হয়েছে হেল্পডেস্ক। এখন থেকে কোনো বাংলাদেশি পর্যটক নিউমার্কেট চত্বরে যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লেই মিলবে সাহায্য।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মনোতোষ সরকার জানান, বাংলাদেশি পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য আমরা আগেও দফায় দফায় বৈঠক করেছি। গোটা এলাকা বাংলাদেশি পর্যটকবান্ধব করতে হবে। এখানে কোনো আপস চলবে না।
তিনি বলেন, কলকাতায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবু আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গোটা এলাকায় নজরদারি বাড়াতে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। কোনো বাংলাদেশি পর্যটক যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমাদের এখানে এসে কথা বলতে পারবেন।
মনোতোষ সরকার আরও বলেন, আবাসিক হোটেল, খাবারের দোকান, কিংবা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলোতে বিশেষভাবে নজরদারি করা হবে, যেন কোনো বাংলাদেশি প্রতারিত না হন।
শ্যামলী পরিবহনের কর্ণধার অবনী ঘোষ বলেন, আমাদের দেরিতে বোধহয় হলেও এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কলকাতায় এমনিতেই নানা কারণে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে এ ধরনের উদ্যোগের ফলে আমার মনে হয় অনেকেই আবার কলকাতায় আসার চিন্তা-ভাবনা করবেন।
কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা ঢাকার বাসিন্দা নীলু হোসেন বলেন, আমি অনেকবার কলকাতায় এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশিদের সুরক্ষার জন্য এত সুন্দর ব্যবস্থা আগে চোখে পড়েনি। ভালো লাগছে।
তিনি বলেন, কলকাতায় যতবার এসেছি, কোনো সমস্যায় পড়িনি। তবু ক্যামেরা, হেল্পডেক্স দেখে নিজেদের আরও সুরক্ষিত মনে হবে পর্যটকদের।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।