কৃষি ঋণ আদায়ের হার সন্তোষজনক

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্থিরতা চলছে। এর কোনোটিই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অস্থিরতা কাটাতে পল্লি ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব ঋণের বিপরীতে আদায়ের হারও সন্তোষজনক। যেখানে খেলাপির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে অন্য খাতসমূহে খেলাপির হার উদ্বেগজনক।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক শিল্পগ্রুপ ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে যায়। অনেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়। তবে ভিন্নতা রয়েছে কৃষকের ক্ষেত্রে। কৃষকেরা কখনো ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। তবুও ঋণ খেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাসে ৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। আর এ খাতে বিতরণ করা মোট কৃষি ঋণের স্থিতি ৫৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে বকেয়া ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে কৃষি ঋণের খেলাপি তিন হাজার ৯৫০ কোটি বা ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আলোচিত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। ব্যাংকটি এই তিন মাসে মোট ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক, যাদের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৬৮১ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাবের ৪৪৬ কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ৪৩৭ কোটি টাকা। কৃষি ঋণ বিতরণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতরণ (পল্লি ও কৃষি ঋণ) করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩৯৭ কোটি টাকা।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষকরা ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। বিপরীতে পরিশোধ করেছেন ৩৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বিতরণ করেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি, এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৮টি।

কৃষকদের দেওয়া ঋণ সুবিধার বড় অংশই বিতরণ হয় এনজিওর মাধ্যমে। ব্যাংক থেকে কৃষকরা ঋণ পান সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদে, যেখানে এনজিওর মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সুদহার দাঁড়াচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশে। প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিতেই বেশিরভাগ ব্যাংক কৃষি খাতের ঋণের ৫০-৮০ শতাংশ এনজিওকে দিচ্ছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নীতিমালা করা হয়েছে। এ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছে দিতে ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা হচ্ছে।

ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন এ হার ছিল ৩০ শতাংশ। কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তা-ও নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষিঋণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষিকাজ করা একটি নতুন ধারণা। শহরাঞ্চলে যা বাড়ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাক-সবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় এটিই ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।

চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যেখানে বেসরকারি ব্যাংক ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা আর কৃষি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা।

ঋণ বিতরণের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) ও ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *