ব্যাংকের ডলার যখন গলিতে

স্টাফ রিপোর্টার

সাধারণত এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ডলার কিনে থাকেন সাধারণ ক্রেতারা। ফলে বরাবরই এক্সচেঞ্জ হাউজের আশপাশে থাকে দালালের দৌরাত্ম্য। নতুন কাউকে দেখলেই জিজ্ঞেস করে, ‘কী লাগবে, ডলার নাকি অন্য কিছু?’। এ চিত্র অবশ্য বেশ পুরোনো। এখন ডলারের ক্রেতা পেলেই নিয়ে যাওয়া হয় পাশের গলিতে। ক্রেতাকে গলির ভেতরে নিয়ে চড়া দামে ডলার বিক্রি করেন ভাসমান এসব বিক্রেতা। মূলত প্রবাসী শ্রমিক বা শ্রমিক ভিসায় দেশের বাইরে যাচ্ছেন- এমন লোকেরাই এদের ক্রেতা। এভাবে সহজেই ডলার মিললেও রয়েছে ঝুঁকি। কারণ, ডলার জাল হতে পারে বা ছিনতাইয়ের আশঙ্কাও থাকে।

মূলত প্রচলিত বাজারে ডলারের সংকটই বাড়িয়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। ভাসমান এসব ডলার বিক্রেতার হাঁকডাকে অনেক সময় পথচারীরা বিব্রত হন। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় অভিযানও চলছে মাঝে মধ্যে। এরপরও থামছে না এভাবে ডলার বেচাকেনা।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল এলাকার এক্সচেঞ্জ হাউজ ও আশপাশে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

বর্তমানে ব্যাংকে ডলার না থাকলেও বাড়তি দামে সহজেই মিলছে খোলাবাজারে। অনেক ব্যাংকেই ডলারের জন্য হাহাকার। ডলার সংকটে এলসি নিষ্পত্তিও করতে পারছে না, অনেকের আবার নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। এমন অবস্থায় খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১১৯ টাকায়।

কথা হয় কুমিল্লার এনামুলের সঙ্গে। শ্রমিক ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাবেন তিনি। এনামুল বলেন, ‘ব্যাংকে ডলার সংকট থাকায় খোলাবাজারে ডলার কিনতে এসেছি। এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতেও ডলার পাইনি। পরে বাইরে বের হতেই দুজন ব্যক্তি জানান নগদ ডলার আছে। এরপর তাদের কাছ থেকে ডলার কিনলাম।’

এনামুল আরও বলেন, ‘এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে বের হতেই আমাকে পুরানা পল্টনের এক গলির ভেতরে ডেকে নেয়। সেখান থেকে ভাসমান বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি ডলার ১১৮ টাকা দরে নিয়েছি। টাকাটা বড় কথা নয়, গলির ভেতরে যাওয়ার কারণে একটু ভয় পেয়েছিলাম। পরে ডলার হাতে পেয়ে ভালো লাগছে।’

একই অভিজ্ঞতার কথা জানান রেজা নামে অপর একজন। বিশেষ প্রয়োজনে থাইল্যান্ড যাবেন তিনি। ডলার কিনেছেন মতিঝিল সানমুন টাওয়ারের পাশের এক গলি থেকে। রেজা বলেন, ‘মুদ্রা জাল না হলেই হবে। দাম বেশি নিলেও তো পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংক-এক্সচেঞ্জ হাউজেতো অনেক সময় ডলার পাওয়াই যায় না।’

যদিও এভাবে ডলার কেনাবেচা ঠেকাতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবৈধভাবে ডলার লেনদেন থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। গত আগস্টে বেশি দামে ডলার বিক্রির দায়ে সাত মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই অভিযোগে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *