সর্বজনীন পেনশনে জমেছে ১২ কোটি টাকা
সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা— এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে। পেনশন স্কিম চালুর দুই মাসে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
পেনশন স্কিম গ্রহণকারীদের জমা দেওয়া চাঁদার টাকা নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রোববার (২২ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে এ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সর্বজনীন পেনশন তহবিল বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সার্বিক তথ্য তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেইসঙ্গে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন তথ্যও জানাবেন তিনি। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর প্রথম সপ্তাহে মানুষের আগ্রহ যে হারে দেখা গিয়েছিল, ধীরে ধীরে সেই আগ্রহ কিছুটা কমেছে। তবে, এখনো মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই মানুষ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করছেন।
সূত্রটি আরও জানায়, শুরুর মতো এখনো সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা এগিয়ে রয়েছেন। চাঁদা পরিশোধকারীর প্রায় অর্ধেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। আর জমা পড়া চাঁদার অর্ধেকের বেশি জমা দিয়েছেন তারা। সব থেকে কম চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যায় সব থেকে কম প্রবাসীরা। তবে, প্রবাসীদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়ি গেছে।
‘আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯১১ জনে। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪৩ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রথম মাসে প্রায় ১৩ হাজার জন চাঁদা পরিশোধ করলেও দ্বিতীয় মাসে করেছেন দুই হাজারের মতো মানুষ।’
গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পরপরই আবেদন শুরু হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর এরই মধ্যে দুই মাস পার হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পর প্রথমদিনেই অর্থাৎ ১৭ আগস্ট নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন।
প্রথম এক সপ্তাহে চাঁদা পরিশোধ করেন ৮ হাজার ৫৫১ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর প্রথম এক মাস শেষে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৯ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
দুই মাস চারদিনের মাথায় অর্থাৎ ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯১১ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪৩ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রথম মাসে প্রায় ১৩ হাজার জন চাঁদা পরিশোধ করলেও দ্বিতীয় মাসে চাঁদা দিয়েছেন দুই হাজারের মতো মানুষ।
নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধকারীর হার কিছুটা কমলেও শুরুর মতো এখনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা চাঁদা পরিশোধে এগিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে এরই মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৬ হাজার ৭০৮ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৬ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে এখন পর্যন্ত যে চাঁদা জমা পড়েছে তার ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা।
চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা। তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৬ হাজার ৭৪ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ২৮ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।
যাদের বর্তমান আয়সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা, তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এ স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ১ হাজার ৬৮১ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এ স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
সর্বজনীন স্কিম গ্রহণকারী প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এরই মধ্যে তারা ১ কোটি টাকার ওপরে জমা দিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে এরই মধ্যে চাঁদা দিয়েছেন ৪৪৮ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
যোগাযোগ করা হলে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, এরই মধ্যে ১৪ হাজার ৯১১ জন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দিয়েছেন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১২ কোটি ৪৩ লাখ ১১ হাজার টাকা। জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে রোববার জানাবেন অর্থমন্ত্রী।
জমা পড়া টাকার সম্পূর্ণ অংশ রোববার বিনিয়োগ করা হবে, নাকি আংশিক বিনিয়োগ করা হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রী আগামীকাল সবকিছু বলবেন। তার আগে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা পড়া চাঁদার অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোববার অর্থমন্ত্রী নিজেই বিনিয়োগের ঘোষণা দেবেন।