দেশবন্ধু পলিমার ছুটছেই
লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ারের দাম। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়া শুরু হয়। মাত্র আড়াই শতংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও এরই মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৬০ শতংশ বেড়ে গেছে।
কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাকি বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে খালি চোখেই বোঝা যায় এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্র রয়েছে। বিশেষ চক্রের ভূমিকা ছাড়া এভাবে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে পারে না।
গত ৩ অক্টোবার ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে দেশবন্ধু পলিমার। লভ্যাংশ ঘোষণা আসার পর ওই দিনই প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ টাকা ২০ পয়সা বা ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়। এরপর গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ে।
এই দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত ছিল গত সপ্তাহজুড়েও। এমনকি এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে ছিল। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে এই কোম্পানির শেয়ার।
গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৯৯০ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২৯ টাকা ৮০ পয়সা।
গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ে ৩২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ টাকা ৩০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বাড়ে ৪৪ কোটি ৭৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৫ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ৬১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৫ টাকা।
শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি প্রতিদিন মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে কোম্পানিাটির শেয়ার। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে আড়াই শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার আগে ২০২২ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২১, ২০২০, ২০১৯ ও ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়।
৬১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৫০টি। এর মধ্যে ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার।
দেশবন্ধু পলিমারের পর গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল সোনালী আাঁশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে এমারেল্ড অয়েল।
এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ দাম বেড়েছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানির দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। একই সঙ্গে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিডের ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ৯ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।