চীনের বিআরআই ঘিরে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) ঘিরে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আকার বিশ্বের অনেক বৃহৎ অর্থনীতির চেয়েও বেশি। এমনটাই উঠে এসেছে চীন সরকার প্রকাশিত শ্বেতপত্রে। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
চীন চলতি মাসে বিআরআইয়ের ১০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের নজির বিআরআই। প্রকল্পটির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটি ডলার ব্যয় করেছে বেইজিং। যদিও সমালোচকরা দাবি করেছে, এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে প্রলুব্ধ করে ঋণের জালে বেঁধে ফেলছে চীন। বেইজিং দাবি করেছে, বিআরআইকে ঘিরে অংশীদারদের চুক্তি সব মিলিয়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ আকার প্রায় রাশিয়া ও কানাডার অর্থনীতির সমান।
চীন সরকার জানিয়েছে, বিআরআইয়ের উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর দেনা রয়েছে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার (এক্সিম ব্যাংক) কাছে। বিআরআই প্রকল্পে ঋণই ছিল প্রধান অনুঘটক। যার পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার। বিআরআই প্রকল্পে ১৩০টির বেশি দেশ জড়িত। সেখানে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কোটি ডলার এবং বাণিজ্য ২ ট্রিলিয়ন ডলারের। গড়ে প্রতি দেশের ঋণ ২৪০ কোটি ডলার।
আটলান্টিক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিভা ইয়াউ বলেন, ‘চীনের সরকার প্রকাশিত পত্রের বাইরে অন্য গবেষণাপত্র আমাদের সামনে রয়েছে। সেটা বিবেচনায় নিলে ঋণের পরিমাণ আরো ৮০ হাজার কোটি ডলার বেশি। যদিও আমরা এখনো প্রকল্পের সব তথ্য সম্পর্কে জানি না। কীভাবে সংখ্যাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারেও আমাদের ধারণা নেই।’
এক্সিম ব্যাংক বিআরআইকে ঘিরে প্রধান সড়ক ও জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। আফ্রিকা থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত অধিকাংশ প্রকল্পের জন্য দেশগুলোয় বেড়েছে ঋণের পরিমাণ। বেইজিংয়ের সিল্ক রুট তহবিল তৈরি করা হয়েছে বিআরআইকে সহযোগিতা করার জন্য। আর তাতে এখন পর্যন্ত ৭৫টি প্রকল্পের জন্য চু্ক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
চীন তার বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে বিআরআইকে। উদাহরণ হিসেবে কেবল ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে আসিয়ান দেশগুলোয় বিআরআইয়ের অধীনে দেশটি বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে সেটা ১ হাজার ৮০ কোটি ডলারে নেমে আসে। মেব্যাংক সিঙ্গাপুরের জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিনিয়োগ ৭২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
চীন সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বিআরআইকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে। যদিও অনেক অংশীদারই ব্যয় সম্পর্কে বিব্রত। ইতালি বিআরআইয়ের প্রথম সারির দেশগুলোর একটি। এর আগে বিনিয়োগ করা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু গত মাসে দেশটি চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার কথা জানিয়েছে।
বেইজিং চলতি মাসেই তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি, আসর কোথায় অনুষ্ঠিত হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মুখপাত্র মাও নিং গত মাসে বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি দেশ ও অংশীদারদের স্বাগত জানাই। তারা বিআরআই সম্মেলনে আসুক এবং পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করুক। এর মাধ্যমেই অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করা সম্ভব হবে।’