ভারতের অষ্টম নাকি শ্রীলংকার সপ্তম শিরোপা
ষোড়শ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল আজ। গত ৩০ আগস্ট পাকিস্তানের মুলতানে শুরু হয়ে আজ কলম্বোয় প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পর্দা নামছে এ আসরের। ফাইনালে লড়বে এশিয়া কাপের দুই চির ফাইনালিস্ট ভারত ও শ্রীলংকা। এশিয়া কাপে এটা শ্রীলংকার দ্বাদশ ও ভারতের দশম ফাইনাল। দুটি দল এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো শিরোপাযুদ্ধে অবতীর্ণ। আজ কি ভারত, নাকি শ্রীলংকার শ্রেষ্ঠত্ব? ভারত কি অষ্টম শিরোপা জিতে নেবে, নাকি সপ্তমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলবে সিংহলিজরা?
এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ভারত আজ হট ফেভারিট হিসেবে নামবে। রোহিত শর্মার দল বৃষ্টিবিঘ্নিত এ আসরের গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলতেই পারেনি। বৃষ্টিতে ভেসে যায় ম্যাচটি। পরে নেপালকে ১০ উইকেটে হারিয়ে শুভসূচনা করে। এরপর সুপার ফোরে টানা দুই জয়ে নাম লিখিয়েছে ফাইনালে। এর মধ্যে পাকিস্তানকে ২২৮ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে রোহিতের দল। বৃষ্টিবিঘ্নিত ওই ম্যাচটি শেষ হয় দুইদিনে। তার পরই মাঠে নেমে শ্রীলংকার বিপক্ষে খানিকটা পরীক্ষার মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তারকাখচিত দলটি ৪১ রানের জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে। ২০ বছর বয়সী দুনিত ভেল্লালাগে বল হাতে ৫ উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে ৪৬ বলে ৪২ রান করে ভারতকে চোখ রাঙাচ্ছিলেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি স্বাগতিকদের।
ভারতের বড় শক্তি টিম স্পিরিট। পুরো দল শিরোপার জন্য মরিয়া। বিশেষ করে আগামী মাসে তাদের মাঠে বসছে ত্রয়োদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর। ওই আসরের আগে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকতেই এশিয়া কাপের শিরোপা চায় রোহিত শর্মার দল।
ভারতের জন্য পজিটিভ হলো ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারের প্রায় সবাই ফর্মে আছেন। রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, ইশান কিশানরা সবাই রান পাচ্ছেন। তবে প্রতিপক্ষ দলটির নাম যখন শ্রীলংকা তখন কাজটি খুব সহজ না-ও হতে পারে রোহিতদের জন্য। সিংহলিজরা এমনিতেই খেলবে নিজেদের দুর্গে। তার ওপর দাসুন শানাকার এ দলটি ভীষণভাবে উদ্দীপ্ত। তাতে মোটেও দমে না গিয়ে পরের ম্যাচেই তারা হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে এবং এ জয়টি তাদের ফাইনাল নিশ্চিত করে। বলতে গেলে তারকাহীন এ দলটির রূপকথার মতো ছুটে চলার পূর্ণতা পাবে আজ এশিয়া কাপে আরেকটি শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে। আজ জিতলে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বে ভারতকে ছুঁয়ে ফেলবে দ্বীপদেশটি। দুই দেশেরই সমান সাতটি করে শিরোপা হয়ে যাবে।
দলটির নাম শ্রীলংকা বলেই ফাইনাল হয়তো একপেশে হবে না। ২০২২ সালের এশিয়া কাপের কথাই ধরুন। ফেভারিট না হয়েও শিরোপা জিতে টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন শানাকারা। অথচ দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের চিত্রনাট্য আগে থেকে লিখে ফেলেছিলেন অনেকে।
সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে-মালিঙ্গা পরবর্তী এ প্রজন্মের ওপর আস্থা রাখা ছাড়া উপায়ও নেই লংকাবাসীর। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেউলিয়াত্ব ঘুচিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লংকানরা। এবার তাদের প্রাণের খেলা ক্রিকেটও ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপের আগে আরেকটি এশিয়া কাপ শিরোপা জয় করবে, সে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন সমর্থকরা।
১৯৮৪ সালে তিন দল নিয়ে শুরু হয়েছিল এশিয়া কাপ আসর। ’৮৫ ও ’৮৬-তে প্রথম দুই আসরে অংশ নেয় ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথম আসরে কোনো ফাইনাল ছিল না। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে লড়াই শেষে ভারত চ্যাম্পিয়ন ও শ্রীলংকা রানার্সআপ হয়। পরের আসরে নিজেদের মাটিতে ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে শ্রীলংকা।
এরপর এশিয়া কাপের বেশির ভাগ শিরোপা গেছে হয় ভারত কিংবা শ্রীলংকায়। ভারত মোট সাতবার ও শ্রীলংকা মোট ছয়বার শিরোপা জিতেছে। এ ১৩ বার বাদ দিলে বাকি দুটি শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। ২০০০ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শ্রীলংকাকে ৩৯ রানে হারিয়ে ও ২০১২ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে মাত্র দুই রানের ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
এশিয়ার তিন পরাশক্তির সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। ফলে তিনবার রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় লাল-সবুজদের। ২০১২ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে পাকিস্তানের কাছে দুই রানে, ২০১৬ সালে টি২০ ফরম্যাটে ভারতের কাছে ৮ উইকেটে ও ২০১৮ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে ভারতের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ২০২২ সালে দুবাইয়ে টি২০ ফরম্যাটের ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবার এশিয়া কাপ জিতে নেয় শ্রীলংকা। আজ তাদের সামনে সপ্তম শিরোপার হাতছানি। আয়োজক হিসেবে আগে চারবার ফাইনাল খেলে তিনবারই শিরোপা উৎসব করেছে সিংহলিজরা। আজ কি তাদেরই দিন?