কোনো খাত দাঁড়াতে পারছে না পোশাক ছাড়া

স্টাফ রিপোর্টার

করোনার প্রকোপ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পণ্য রপ্তানিতে কিছুটা অস্থিরতা চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। এ ধকল অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তৈরি পোশাক। তবে রপ্তানি আয়ে অন্য খাতগুলোর বেশির ভাগই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ গত জুলাই-আগস্টের রপ্তানিও সেই ধারায় শেষ হয়েছে। এই দুই মাসে পোশাকের রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি হয়েছে। অন্যদিকে পোশাকের বাইরে প্রধান চার পণ্যের রপ্তানি কমেছে। লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি। পণ্যগুলো হচ্ছে– চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইলস।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত দুই মাসে পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মোট ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে এ সময়। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান  বলেন, পোশাকের রপ্তানি আদেশ আবার বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে। অবিক্রীত মজুতও কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে রপ্তানি কম হয়েছে ৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে মোট ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের।

রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন লেদার অ্যান্ড লেদারগুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) প্রধান নির্বাহী জয়নাল আবেদিন বলেন, চামড়া খাতের এই পতনমুখী প্রবণতার অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হচ্ছে কমপ্লায়েন্স শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতা। চামড়া খাতের কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ক্রেতা এবং পরিবেশবাদীদের সংগঠন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) অডিটে মান অর্জন করতে পারছে না কারখানাগুলো। চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) অকার্যকারিতায় কারখানাগুলো পিছিয়ে পড়ছে।

একসময়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি অর্থবছরের দুই মাসে কমেছে ১০ শতাংশেরও বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। গত দুই মাসে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বিজেএমএর মহাসচিব আব্দুল বারেক খান  বলেন, নীতি-সহায়তার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে এখনও। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার দীর্ঘদিন পর পাটকে কৃষিপণ্য করা হলো। এর মধ্যেও প্রক্রিয়াজাত পাটকে শিল্পপণ্যের তালিকায় ফেলে বাদ দেওয়া হলো। এ কারণে কৃষিপণ্যের সুবিধা পায় না পাটপণ্য। কাঁচা পাটকে এ সুবিধা দেওয়ায় এর রপ্তানি বাড়ছে। তবে পণ্য উৎপাদনের জন্য পাট ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। আবার কাঁচা পাট কেনার সময় ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ রয়েছে। পাটপণ্য রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর রয়েছে। মুনাফার ওপর ৩ শতাংশ কর এবং প্রণোদনার ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতসব প্রতিকূলতায় প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না পাট খাত।

 

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ১ শতাংশের মতো। রপ্তানি হয়েছে ১৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে ৫৩ শতাংশ। মোট ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে গত দুই মাসে।

পোশাকের ওপর ভর করে গত দুই মাসে সার্বিক রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশের কিছু বেশি। মোট ৯৩৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাস দুটিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে আগস্টে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ শতাংশের মতো কম। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। গত মাসে মোট ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *