চীন-মার্কিন সয়াবিন বাণিজ্যে ধোঁয়াশা কাটছে?
সয়াবিনের বৈশ্বিক বাণিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর চীনের ক্রমবর্ধমান বাজার। কেননা চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক দেশ। প্রতি বছর বিশ্বের অন্য দেশগুলো সম্মিলিতভাবে যে পরিমাণ সয়াবিন আমদানি করে, চীন এককভাবেই তার চেয়ে বেশি সয়াবিন আমদানি করে থাকে।
এ কারণে চীনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের ঝামেলা কিংবা উত্তেজনার প্রভাব পড়ে কৃষিপণ্যটির বাজারে। চলতি বছর চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ সয়াবিনের বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে। বাড়তি আমদানি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনা আমদানিকারকরা কৃষিপণ্যটির আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে সয়াবিনের দামে।
তবে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক লাখ টন সয়াবিন আমদানি করেছে চীন। এ কারণে সয়াবিনের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কহার তুলে নেয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এ গুঞ্জনে মার্কিন রফতানিকারকরা খুশি হলেও উদ্বেগ বেড়েছে ব্রাজিলীয় সয়াবিন রফতানিকারকদের। তারা বাজার হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। খবর রয়টার্স, ব্লুমবার্গ ও বিবিসি।
বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে চলতি বছরের জুলাইয়ে মার্কিন সয়াবিনের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। এর জের ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ সয়াবিন রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন চুক্তির আওতায় কৃষিপণ্যটির আমদানি বন্ধ করে দেন চীনা আমদানিকারকরা।
এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪৮ টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। অক্টোবরে এ পরিমাণ আরো কমে দাঁড়ায় ৬৬ হাজার ৯৫৫ টন। তবে এসব চালানের সয়াবিন বাড়তি আমদানি শুল্ক আরোপের আগেই কেনা হয়েছিল। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে নতুন সরবরাহ চুক্তির আওতায় ১১ লাখ ৩০ হাজার টন সয়াবিন কিনেছেন চীনা আমদানিকারকরা। মূলত এর মধ্য দিয়েই সয়াবিন খাতে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের ছায়া দূর হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামকে কেন্দ্র করে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন খাত। এখন ধোঁয়াশা কাটার সম্ভাবনায় উত্ফুল্ল মার্কিনিরা।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের ডেপুটি সেক্রেটারি স্টিভ শেনসকি বলেন, ‘লাখ লাখ টন সয়াবিন কেনার চীনা উদ্যোগ খুবই ভালো একটি পদক্ষেপ। তবে এ অগ্রযাত্রার পথে আরো এগিয়ে যেতে হবে।’ টেনেসিভিত্তিক ব্রোকারেজ স্ট্যান্ডার্ড গ্রেইনের প্রেসিডেন্ট জো ভাকলাভিক বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধের ধোঁয়াশা কাটার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচনা।’
আইএনজি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবার্ট কার্নেল বলেন, চীনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন প্রয়োজন। এ কারণে কৃষিপণ্যটির আমদানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিনিরা চীনের সয়াবিনের বাজারে পুরনো প্রভাব হারিয়েছে। উঠে এসেছে ব্রাজিল।
তবে সম্প্রতি আর্জেন্টিনায় জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর থেকে সয়াবিন খাতে ধোঁয়াশা কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এমনকি সয়াবিনের ওপর বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার করা হতে পারে।
২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে রফতানি হওয়া পণ্যের তালিকায় শীর্ষে ছিল সয়াবিন। তবে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর চীনা আমদানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্রাজিল থেকে কম দামে পণ্যটি আমদানিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধে সরাসরি লাভবান হয় ব্রাজিল। এখন নতুন সরবরাহ চুক্তির আওতায় বাণিজ্যযুদ্ধের ধোঁয়াশা কাটার সম্ভাবনায় সমস্যায় পড়তে পারে দেশটি।
এ বিষয়ে ব্রাজিলের কৃষিমন্ত্রী ব্লেইরো ম্যাগ্গি বলেন, সয়াবিন বাণিজ্যে যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় ব্রাজিল প্রস্তুত রয়েছে। চীন সরকার মার্কিন সয়াবিনের ওপর বাড়তি আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিলে ব্রাজিলীয় রফতানিকারকরা সমস্যায় পড়বেন, এতে সন্দেহ নেই। কৃষিপণ্যটির রফতানি বাজার বাণিজ্যযুদ্ধের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারে। তবে আমরা এসব সমস্যা সমাধান ও বাজার ধরে রাখতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।