ফের নিম্নমুখী রেমিট্যান্স

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল। মাসিক রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে গত তিন বছরের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। জুনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। পরের মাস জুলাইয়ে নিম্নমুখী হয় সেই ধারা। কমে যায় রেমিট্যান্স। জুলাইয়ে মোট রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

জুনের রেকর্ড স্পর্শ করতে না পারলেও অন্তত জুলাইয়ের ধারা অব্যাহত রাখার আশা প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সে আশা ফিকে হয়ে যায় মাস শেষের হিসাবে। কারণ, পুরো আগস্ট মাস শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক ডলার সমান ১০৯ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা আগের মাস জুলাইয়ের তুলনায় কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রবাসী আয় প্রবাহের এসব চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, আগস্ট মাসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত জুন ও জুলাই মাসের চেয়ে অনেক কম। গত জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং জুনে এসেছিল রেকর্ড ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৭ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার।

তবে আলোচিত সময়ে ৭ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

এর আগে সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (এক ডলার সমান ১০৮ দশমিক ৫০ টাকা হিসাবে) এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার বেশি। এতে আগের মাস জুনের তুলনায় প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্সে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

গত জুন মাসে রেকর্ড ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল গত প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল।

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এসেছিল। টানা পাঁচ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে আর যেতে পারেনি। অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে আসে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার আসে।

গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ এবং মে মাসে আসে ১৬৯ কোটি ডলার। সবশেষ ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে গত জুন মাসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর সবশেষ মাস আগস্টে এলো ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *